পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ডোমরাবাদ এলাকায় ধানবোঝাই ট্রলারের ধাক্কায় ’ডোমরাবাদ-জলিশা সংযোগ ব্রীজ’ টি ভেঙ্গে গত ৫বছর ধরে বেড়েরধন নদ এ পড়ে আছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় গত ৫বছর যাবত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হতেন স্কুল শিক্ষার্থী ও কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি নদ’র তীরবর্তী দুই পার্শ্বের স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজস্ব অর্থায়নে ভাঙ্গা সেতুর পশ্চিমাংশে গাছ দিয়ে অস্থায়ী সাকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে মির্জাগঞ্জ উপজেলার ডোমরাবাদ ও পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার জলিশাসহ দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগ। ভেঙ্গে পড়ার পর পরই উপজেলা এলজিইডি বিভাগ ভাঙ্গা লোহার এ্যাংগেলগুলো নিজেদের হেফাজতে নিলেও ব্রীজের বড় একটি ভাঙ্গা অংশ অপসারন না করায় এখনও পর্যন্ত ব্রীজের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে নদে চলাচলরত মালবাহী ট্রলার নিরাপত্তাহীরতায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে, নদ পারাপারে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থাণীয় কৃষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সাধারণ মানুষদের। তবে বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদেরকে ৪-৫ কিলোমিটার পথ বেশি চলতে হচ্ছে। এদিকে ঝুঁকি ও দূর্ঘটনার আশংকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে স্থানীয় ডোমরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জানা যায়, ২০০৬ সালে ৭ এপ্রিল মাসে সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটির পশ্চিম পাড়ে পাশ্ববর্তী বরগুনার বেতাগী উপজেলার জলিশা ও পূর্ব পাড়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ডোমরাবাদ গ্রাম। সেতুটি দিয়ে উপজেলার ডোমরাবাদ, উত্তর আমড়াগাছিয়া, মধ্য আমড়াগাছিয়া এবং ওপারের হোসনাবাদ,জলিশা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতেন। কিন্তু ব্রীজটি নির্মানের ১৪ বছর পরে ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে একটি ধান বোঝাই ট্রলারে ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়ে। এতে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়ে দুই উপজেলার মানুষ।
মঙ্গলবার ডোমরাবাদ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়েরধন নদ এ ব্রীজের পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা একাংশ পূর্ব পাশের অবকাঠামোর সাথে ঝুলে পড়ে রয়েছে। সেতুটি ভাঙ্গার পরে কোন সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর স্কুুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দারা জন প্রতি ৫টাকার বিনিময়ে প্রতিবার পারাপার হতেন। সম্প্রতি স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সেতুর পশ্চিমাংশের ভাঙ্গা অংশে গাছ দিয়ে সাকো তৈরি করে চলাচল করছেন। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুই পার্শ্বে নেট (মাছের ঘেরে ব্যবহৃত সবুজ রংয়ের বিশেষ কাপড়) লাগিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন নদ তীরবর্তী দুই গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী,অভিভাবক, কৃষকসহ সহস্রাধিক মানুষ।
স্থানীয়রা বলেন, নদ’র উপর ব্রীজ না থাকায় দুই উপজেলার যোগাযোগ, কৃষি আবাদ, হাট-বাজার ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রাম গুলোতে বসবাসরত কোন রোগীকেও জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১০-১২ কিঃমিঃ পথ ঘুরিয়ে নিতে হচ্ছে। অথচ এখানে ব্রীজ থাকলে অনেক সহজে এবং তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতো। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরাও তাদের আবাদকৃত ফসল ঠিকমত বাজারে বাজারজাত করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা। গত ৪বছরের অধিক সময় ধরে স্কুলের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ডিঙ্গি নৌকায় জনপ্রতি ৫টাকা ভাড়া দিয়ে নদ পার হতেন। সম্প্রতি দুই পারের বাসিন্দারা চাঁদা তুলে গাছ দিয়ে সাকো তৈরি করে নেট দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। এতে কষ্ট কিছুটা লাঘব হলেও কোনো সন্তান সম্ভাবা প্রসূতি মা সহ যে কোনও রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে ১০-১২ কিঃ মিঃ পথ ঘুরিয়ে হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে স্থানীয় কৃষকরা তাদের আবাদকৃত ফসল সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না, ফলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা।
হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইউসুফ মিয়া বলেন,আমার এক মেয়ে ও দুই ভাতিজা ডোমরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো,ব্রীজ ভাঙ্গার পরে কিছু দিন নৌকায় যাতায়াত করে ক্লাশে যেতো। এখন সাঁকো দিয়ে পার হতে বাচ্চাদের ভয় লাগায় ওদেরকে বেতাগী উপজেলার জলিসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি।
ডোমরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান ও আলী আকবর বলেন, এই সেতুটি ৫বছর আগে ভেঙ্গে পড়ে, স্থাণীয় চেয়ারম্যান - মেম্বাররা এটা সংস্কারে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থাণীয় মানুষা চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে, মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই, নির্বাচন এলেই তারা ভোটের জন্য পাগল হয়ে যায়। স্কুল শিক্ষার্থী ও কৃষকসহ বাসিন্দাদের দূর্ভোগ লাঘবে অতি দ্রুত এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করার দাবী জানাই। এতে শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিয়া শিক্ষিত হওয়াসহ স্থানীয় কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।
ডোমরাবাদ সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মার্জিয়া আক্তার,সুমাইয়া ও সুজন বলেন, ব্রীজ ভাঙ্গার পর প্রতিদিন ১০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতাম। আমাদের কয়েক সহপাঠী এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এখন সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে অনেক ভয় লাগে।
ব্রীজ সংলগ্ন ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফিরোজ আলম বলেন, ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পশ্চিম পাড়ের হোসানবাদ গ্রামের প্রায় ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারে না। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা খেয়া পার হয়ে আসলেও সাঁকো পারাপার ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আসতে পারছে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, ডোমরাবাদ এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজের স্থানের সয়েল টেষ্ট সম্পন্ন করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শেষ করে অতি শীঘ্রই ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করা হবে।