ক্ষতির পরিমান ৩৩ কোটি টাকা ২৮লাখ টাকা

ভালুকায় শিল্পের বর্জ্যে ৩৩৬ একর ধানী জমি ১৫ বছর ধরে পতিত

এফএনএস (মোঃ আলমগীর হোসেন; ভালুকা, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:৩০ পিএম
ভালুকায় শিল্পের বর্জ্যে ৩৩৬ একর ধানী জমি ১৫ বছর ধরে পতিত

শিল্প কারখানার অপরিশোধিত দুষিত বর্জ্য ও রংঙ্গের পচা পানি কৃষি জমিতে গিয়ে প্রায় তিন শত ছয়ত্রিশ একর ধানী জমি ১৫ বছর ধরে পতিত পড়ে রয়েছে। স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী জমির পরিমান আরো বেশী। ভরাডোব ইউনিয়নের চারটি কৃষি ব্লকে ক্ষতির পরিমান ৩৩ কোট ২৮ লাখ টাকা। কৃষকের ধান উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় কৃষি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে কৃষকের সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব অনটন। কৃষকরা জমি রক্ষার আনন্দোলন সংগ্রাম করেও পাচ্ছেন না কোন সমাধান। পচা পানির গন্ধে আশপাশের মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষকরা জরুরী ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান,ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নে অবস্থিত এক্সপেরিয়েন্স মিল,বাশার স্পিনিং মিল,মুলতাজিম মিল সহ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দুষিত বর্জ্য ও রংঙ্গের পচা পানিতে নষ্ট হয়ে শত শত একর জমিতে ১৫ বছর ধরে আবাদ বন্ধ রয়েছে। পচা পানিতে নামলে শরীরে চুলকানি ও গাঁ দেখা দেয়। ধান রোপন করলে পচে মরে যায়। রংঙ্গের পচা পানির কারনে বিলে মাছসহ জলজ প্রাণী পর্যন্ত মরে গেছে। বিলের পাচা পানির গন্ধে আশপাশের বাড়ী ঘরে মানুষ বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কৃষকরা যে জমি থেকে ধান উৎপাদন করে সংসার চালিয়ে বিক্রি করতো এখন তাদের সারা বছর চাল কিনে সংসার চালাতে হয়। ধানী জমিতে কচুরী পানা হয়ে অন্ধা বিলের পরিনত হয়েছে। 

কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, উপজেলার ভরাডোবা এলাকায় একাধিক কারখানা থেকে অনবরত দূষিত বর্জ্য ফসলের জমিতে গিয়ে শত শত একর জমির ফসল উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করার জন্যে  উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা,সমাজসেবা কর্মকর্তা,৪ টি কারখানার প্রতিনিধি, এবং এলাকার কৃষক প্রতিনিধি মো. রুহুল আমিনকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে গত ০৯ জুলাই, থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দফায় গণশুনানী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। চার দফা গণশুনানীতে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চার দিনের গণশুনানীতে শিল্পের দূষিত বর্জ্যে উপজেলার ভরাডেবা ইউনিয়নের ভরাডোবা, পুরুড়া, রাংচাপড়া ও ভাটগাঁও কৃষি ব্লকে মোট ৩৩৫ দশমিক ৭৪ একর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এতে, উৎপাদন ব্যয় ছাড়াই প্রতি একর জমির জন্য বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৬ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। ১৫ বছরে সর্বমোট ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তদন্ত কমিটির দেয়া সুপারিশে কৃষকের মোট আর্থিক ক্ষতির ৭৫% টাকা স্থানীয় এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল লিমিটেড এবং ২৫% টাকা মুলতাজিম স্পিনিং মিল লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপুর পরিশোধ না করায় ২৯ অক্টোবর সকালে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যায় এবং ক্ষতিপুরনের দাবী জানান।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দ্যুলাহ আল মাহমুদ জানান, মিল কর্তৃপক্ষের সাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি ফায়সালা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সম্ভব না হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তাতেও সমাধান না হলে মামলা করে কৃষকের ক্ষতিপুরন আদায় করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে