পরিত্যক্ত গাছের গোড়ালি কিংবা শিঁকড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের শিল্পকর্ম। পিরোজপুরের নেছারাবাদের ইন্দুরহাট সোহাগদল ইউনিয়নের কৌঁড়িখাড়া সন্ধ্যা নদীর তীর ঘেষে খেয়াঘাটে গোলাম মোস্তফার দারুশিল্প শেঁকড় থেকে শেঁকড়ে শিল্পকর্ম প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে ২০১১ সালে। দারুশিল্প শিল্পোদ্যোক্ত মোস্তফা বলেন, “ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে কারও ওপর আর্থিক ভরসা না করে নিজেই শিল্পকর্ম কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। কাঠের দুষ্প্রাপ্যতা ও দুর্মুল্য নকশায় অলঙ্করণ তেরির দক্ষ অভাব এবং আর্থ-সামাজিক অবক্ষয়ে অনেক শিল্পকর্মই হারিয়ে যাচ্ছি। তিনি পুরনো ঢাকায় দারুশিল্পী মিস্ত্রী হিসাবে প্রায় ২৫ বছর কাজ করছেন। সেখান থেকে কলাকৌশল শিখে পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে শিল্পকর্ম কারখানাটি ছোট একটি কাঠের ঘরে গড়ে তুলেন। বছরে ২ মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন-জঙ্গল ঘুরে অব্যবহারিত ফেলে দেয়া গাছের গোড়ালি বা শিঁকড় সংগ্রহ করে বছরের বাকী মাসগুলোতে শিল্পকর্ম কারখানাটিতে গোড়ালি বা শিকড় ঘষামাঝা করে তৈরী করেন অঙ্কিত বা খোদিত পশুপাখি, সামুদ্রিক মাছ, নানাবিধ জীবজন্ত্তর, ভাস্কর্য দেয়ালচিত্র, হ্যরিকেন, ঢেঁকি এবং প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ সর্বপ্রথম আত্মরক্ষার জন্য গাছের শিঁকড়ের দুষ্পাপ্যতা ও দুর্মুল্য নকশায় অলঙ্করণ লাঠিসহ গৃহস্থেদের ব্যবহারের জন্য নান্দনিক ব্যবহার্য আসবাবপত্র”। গাছের শেঁকড় দিয়ে দৃষ্টিনন্দন সুন্দর ধর্মীয় ভাস্কর্য, পৌরাণিক কাহিনী, লোকশিল্প ইত্যাদি নির্মাণ করে কোনো রকমে চলছে তার ৭ সদষ্যের সংসার। শিঁকড়গুলো হাতুড়ী-ভাঢলই দিয়ে ঘষে-মেঝে প্রতিটি শিল্পকর্মই যেন জীবন্ত দৃশ্য। শিল্পকর্মই তার জীবন-জীবীকার স্বপ্ন”। এ কারখানায় সম্পৃক্ততা কর্মচারিরা হারুণ বলেন, পল্লীর দারুশিল্পী পৈতৃক পেশা কোন রকমে টিকিয়ে আছে। এ পেশাই আমাদের সংসার উপর্যনের উৎস। যা ছাত্র-ছাত্রী ও গৃহস্থেদের প্রতিনিয়ত অপরিহার্য আসবাব পত্র কিনছেন। হাতড়ি-ভাটরির খোটা-খুটির মধ্যদিয়ে নিজের হাতে নিখুঁত তৈরি গাছের শিঁকড় দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের নানা ধরনের তৈজস পত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সৌখিন মানুষ নকশী করা তৈজস আসবাবপত্র পাইকারি দরে কিনে নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলেন, ঢাকা সহ প্রায় চল্লিশ বছরের অধিক সময় ৭০ উর্ধ্ব বয়সের মোস্তফা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অভাবের সংসারে এ পেশায় টিকে আছেন। নিখুঁত কারিগর হিসাবে এলাকায় রয়েছে বেশ যশ ও খ্যাতি। যেকোন গাছের ঁিশকড় দেখে তিনি সহজেই বুঝতে পারেন এই বস্তুটি দিয়ে কি ধরনের শিল্প তৈরী করা যায়। কিন্তু আর্থিক অভাবের তাড়নায় তিনি মাঝে মাঝে বুকে চাপা ক্ষোভ নিয়ে কাজে মন বসাতে হিমসিম খাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠাপশকতা পেলে এই শিল্পকর্মকে তিনি নিজের মত করে সাজাতে পারবেন।
স্বরূপকাঠি শিল্পোদ্যোক্ত মোজাম্মেল হক বলেন, পিরোজপুরের বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব কুঠির শিল্পের আরও প্রসার এবং ক্ষুদ্র কারিগরদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা এখন সময়ের দাবী। অন্যদিকে, যেমন হারিয়ে যাওয়া এসব দুর্লভ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে সমাজে ভূমিকা রাখা সংশ্লিষ্টদের দাবী। তবে প্রাচীনকাল থেকে আজঅবধি বাংলার দারুশিল্পীরা যে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা মেমন বিস্ময়কর তেমনি গৌরবোজ্জ্বল। তাই দারুশিল্পের ইতিহাস সমৃদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী। এ দারুশিল্প বাংলার হাজার হাজার বছর ধরে চলমান রয়েছে। বর্তমানে তা বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।
স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা রিয়াজ-উল-হাসান বলেন, নেছারাবাদে দারুশিল্প শিল্পোদ্যোক্ত মোস্তফা দারুশিল্পর শিল্পকর্মের সম্মলিন ঘটয়িছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত পরিত্যক্ত গাছের শিকড় দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের বিভিন্ন লোকশিল্প ইত্যাদি নির্মাণ করে আসছেন। তার তৈরি জীবজন্ত্তর, ভাস্কযর্, দেয়ালচিত্র গুনগত মানও ভাল দেখতে আকাশীয়। শিল্পোদ্যোক্ত যদি কোন আর্থিক সহায়তা চান সে ক্ষেত্রে বিসিকের নিয়ম নীতি অনুসরণ করে প্রথমে শিল্প নগরীর নিবন্ধন করতে হবে। পরবর্তীতে আর্থিক সহায়তা আবেদন করলে পিরোজপুর জেলা কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র ঋণ ও যে কোন আর্থিক সহায়তা করা হবে।