পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত দুই বাংলাদেশি তরুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত দুই বাংলাদেশি তরুণ

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে দেশটির যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রতন ঢালী (২৯), অন্যজন ফয়সাল হোসেন (২২) নামে এক তরুণ, যার পরিচয় এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর)।

বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (সিটিটিসি) ইউনিট বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া আফরোজ বলেন, “আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি, রতন ঢালী টিটিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, রতন ও ফয়সাল ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে পৌঁছে তারা টিটিপিতে যোগ দেন। দুজনই এর আগে ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কাজ করতেন।

রতন ঢালীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি সর্বশেষ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ২০২৪ সালের রোজার ঈদে, ১০ এপ্রিল। তখন জানান, তিনি ভারতে আছেন এবং শিগগিরই দুবাই যাচ্ছেন। মায়ের প্রশ্নে বলেন, তাঁর কর্মস্থল থেকেই টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর থেকে আর যোগাযোগ করেননি।

রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী, যিনি একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক, জানান, ছেলে গ্রামের বাড়ি থেকে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “দুবাই যাওয়ার জন্য কাগজ দরকার বলেছিল। আমি দেখতে চেয়েছিলাম কে পাঠাচ্ছে, কিন্তু সে বলেছিল এতে সমস্যা হবে।”

পরিবার জানায়, রতন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে তা ছেড়ে দেন এবং পরবর্তীতে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে শুরু করেন। স্থানীয়দের ভাষায়, রতন ছিলেন শান্ত স্বভাবের তরুণ, তবে বিদেশ যাওয়ার আগ্রহে হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে টিটিপির ৫৪ যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পাওয়া তথ্য থেকেই রতন ও ফয়সালের নাম উঠে আসে। নিহতদের মধ্যে এর আগে বাংলাদেশের সাভারের আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজও ছিলেন।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিটিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রতন ও ফয়সাল শুধু যুদ্ধেই অংশ নেননি, বরং বাংলাদেশি তরুণদের অনলাইনে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে সতর্কতা জারি করেছে।

চরমপন্থার এই নতুন ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তারা বলছে, অনলাইন প্ররোচনা ও চাকরির প্রলোভনে তরুণদের বিদেশি জঙ্গি সংগঠনে টেনে নেওয়া এখন বড় হুমকি হয়ে উঠছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে