বরিশালে অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালস এর শ্রমিকদের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরাজ করছে। এতে করে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দিনভর বরিশাল নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ কবি জীবনানন্দ দাশ (বগুরা রোড) সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে আশপাশের এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তা বেগম বলেন, গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রমিকরা কারখানার গেট আটকে বগুরা রোডে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে।
এতে বগুরা রোডের একটি অংশ আটকে গেলেও বটতলা রোড হয়ে বগুরা রোডের অন্য অংশ দিয়ে মুনশি গ্যারেজ এলাকায় যাতায়াত করা যেত। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে কিছু শ্রমিক বটতলা রোড ও আড়ং এর সামনের সড়ক আটকে অবস্থান নিয়েছে। এতে ওই রোড দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা চৈতন্য স্কুলের মাঠে বসে বসে দিন কাটালেও তারা সড়ক দিয়ে যান চলাচলের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নতুন করে সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকরা জানান, তারা সকলে অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসের আইভি ফ্লুইড বিভাগের কর্মচারী।
স্টোরি প্যাক বিভাগের ৪৪৪ জন কর্মচারীকে নিয়ম মেনে কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহতি দেয়। অব্যাহতি যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়ম মেনে কারখানা থেকে পাওনা টাকাও নিয়ে গেছেন। তবে এখন শ্রমিক, বহিরাগত ও রাজনৈতিক দলের লোকদের নিয়ে অবৈধভাবে আন্দোলন কর্মসূচির নামে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন, শ্রম অধিদপ্তর বারবার মালিক পক্ষকে রেখে বৈঠকও করেছে কিন্তু সেই বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্তই আন্দোলনকারীরা মানছে না। এদিকে যাদের চাকুরি রয়েছে তারা কারখানা খুললেও আন্দোলনকারীদের কারণে কাজে যেতে পারছেন না। অথচ তাদের বিভাগ বন্ধ থাকলে দেশজুড়ে স্যালাইনের সংকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তাই তারা সার্বিক বিবেচনা করে কাজে যোগ দিতে গেলে মঙ্গলবার সকালে আন্দোলনকারীদের বাঁধার মুখে পড়েন। এসময় বহিরাগতরা চাকুরিরত শ্রমিকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
তবে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা বলছেন, কারখানার মালিক পক্ষ আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ে এসে চাকুরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয় এবং পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। এখন তারা পাল্টা অবস্থান নিয়ে বগুরা ও বটতলা রোড আটকে দিয়ে জনভোগান্তি করছে।
আর তাদের কারনে ১৮ দিন ধরে যে ভোগান্তি হচ্ছে তা স্থানীয় বাসিন্দারা মেনে নিয়ে আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন। অপসো স্যালাইন ফার্মা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মিয়া বলেন, মালিকের কোনো কৌশল এখানে টিকবে না। তারা সহিংসতা চান না।
১৮ দিন ধরে অহিংস ভাবেই আন্দোলন চালাচ্ছেন এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করা শ্রমিকদের চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত চলবে। এদিকে সকালে কারখানার সামনে মালিকপক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মালিক পক্ষের হয়ে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার অনিন্দ কুমার সরকার জানান, শ্রম আইন মেনে অপসোনিনের স্টোরি প্যাক বিভাগের ৪৪৪ জন শ্রমিককে অবসান দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য ৫০ ভাগ শ্রমিক তাদের পাওনা বুঝে নিয়েছে। কিন্তু কিছু শ্রমিক ও বহিরাগতরা অন্য বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাঁধা প্রদান করছে।
তিনি আরও জানান, এতে করে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যেহেতু ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে তাই উৎপাদন বন্ধ থাকলে সামনে সংকট দেখা দেবে।