থামেনি মাদকের দৌরাত্ম্য: নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে

সম্পাদকীয় | প্রকাশ: ৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম
থামেনি মাদকের দৌরাত্ম্য: নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে

মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধিতে যারা একবার জড়িয়ে পড়ে তাদের জীবনটা ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। সমাজে কৌতূহল, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের প্ররোচনা, অসৎ সঙ্গ, হতাশা ও আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মাদকাসক্তরা পরিবার ও সমাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তারা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশ্ন হলো যদি মাদক দেশে না থাকত তাহলে কী এই মানুষ গুলো এমন খারাপ নেশাতে জড়াতে পারত? নিশ্চয় পারত না। তাহলে আমাদের কী এটি নির্মূল করা উচিত নয়? আমাদের দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করলেও এর কোনো কার্যকারিতা আমরা দেখতে পায় না। বরং হরহামেশাই মাদকের আধিপত্য চলতেই থাকে। এর দায়ভার আসলে কার? নিশ্চয় এর দায়ভার ক্ষমতাশীন সরকারেরই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ভারত ও মিয়ানমার থেকে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ পর্যন্ত ২৫ ধরনের মাদক শনাক্ত হয়েছে। ৮৮ শতাংশ মাদক আসছে ভারত থেকে, মিয়ানমার থেকে ৮ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ আসছে অন্যান্য দেশ থেকে।  মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩২টি জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। প্রতিবেদনে ছয়টি বিভাগের ৩২টি জেলার ৯৬ থানার ৩৮৬টি মাদক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ইউএনওডিসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যত মাদক ঢুকছে, এর মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে; যা রীতি মতো হতাশ করার মতো তথ্য। যে দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করা আছে, সেই দেশে মাত্র ১০ শতাংশ মাদকে জড়িত ধরা পড়ছে। সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি হিসাবে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। বছরে মাদকের পেছনে খরচ হয় আনুমানিক ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক, ব্যবসায়ী, বাহক ও বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে প্রায় ২ লাখ ব্যক্তি। প্রতি বছরই বাড়ছে এ সংখ্যা। বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতি বছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেই পড়ছে। ফলে দেশ বিপাকে পড়ছে। বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশে ব্যাপক অভিযান চলছে। এতে গ্রেপ্তার হচ্ছে মাদকের সাথে জড়িতরা। এমন অভিযানের জন্য আমরা কর্র্র্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসি এবং আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের অভিযান অব্যাহত থাকলেও থামেনি মাদকের আধিপত্য। তাই এই বিষয়ে নজরদারিতে আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করছি। আমরা বিশ্বাস করি সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাধ্যমেই মাদক মুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব। এক্ষেত্রে মাদকের স্পর্টগুলো নজরদারিতে রেখে চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে মাদকের দেনলেন। তাহলেই মাদক নির্মূল হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে