বরিশালের মুলাদীতে সেতুর নাম পাল্টে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিযোগে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনেই হামলা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়রে সচবি ও অন্যান্য র্কমর্কতার অনুষ্ঠানে পৌছার আগে হামলা চালায় নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের বাসিন্দারা। এসময় হামলাকারীরা সেতুর নাম ফলক, সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে এবং লালগালিচা নিয়ে যায়। এতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়। সৌহার্দ্য সেতুর নাম পাল্টে ৩৬ জুলাই সেতু এবং সেতু নির্মাণের উদ্যোক্তদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় দুই গ্রামের সাধারণ মানুষ এ হামলা করেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে মুলাদী থানা ও কালকিনি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও কর্মকর্তারা সেতু উদ্বোধন না করে ফিরে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী কাচিচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সাইফুল ইসলাম জানান, আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর সেতু উদ্বোধনের জন্য শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম সরওয়ার, মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত হন। সকাল ১০টার দিকে নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের দুই শতাধিক লোক সেতুর পূর্বপাড় থেকে উদ্বোধন মানিনা শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌছে প্রথমেই ফলক ভেঙে ফেলেন। পরে বিক্ষুদ্ধরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনেই সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে লালগালিচা নিয়ে যান। নাজিরপুর-রামারপোল সৌহার্দ্য সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের চেষ্টা করায় বিক্ষুদ্ধরা অনুষ্ঠান পণ্ড করতেই এ হামলা চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকার সঙ্গে নাজিরপুর উপজেলার যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নাজিরপুর-রামারপোল 'সৌহার্দ্য সেতু' নামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমদাদুল হক মজনু। দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ থাকার ফলে চলতি বছর মূল সেতু নির্মান কাজ শেষ হয়। সংযোগ সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব মো. আয়মন হাসান রাহাত মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটির নাম পাল্টে ৩৬ জুলাই সেতু করে ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের দিন ধার্য্য করেন। শনিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে উদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়ার সেতু উদ্বোধনের কথা ছিলো। সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা আসার আগেই স্থানীয়রা অনুষ্ঠানে হামলা করেন। ওই অনুষ্ঠানে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক মজনুসহ স্থানীয় অনেককে দাওয়াত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এর জেরধরে স্থানীয়রা ভাঙচুর করে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন।
এব্যাপারে মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আড়িয়াল খাঁ নদীর সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে মুলাদী থানা ও কালকিনি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম সরওয়ার জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে সেতুটির নাম নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিলো। শনিবার স্থানীয়দের হামলায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি।