দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে মা-মেয়ে ও ছেলেকে ঘরের মধ্যে পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাটি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের বছির মেম্বারপাড়ায় ঘটেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের বছির মেম্বারপাড়ার মৃত মফুরউদ্দীনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪৫) ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতো এবং সরকারের দেয়া অনুদানে প্রাপ্ত ঘরে বসবাস করতো। পরিবারে মাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। এর একপর্যায়ে ভিকটিম কিশোরী মেয়ে (১৫) ওই এলাকার পালপাড়ার মৃত নির্মল চন্দ্র পালের ছেলে উপেন চন্দ্র পাল ওরফে কালুর (৩৬) বাড়িতে কুমারের মাটির কাজ নেয়। এতে কালুর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভিকটিমের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে কালু তাকে বিভিন্ন প্রকার উচ্চাবিলাসী প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাবসহ উত্যক্ত করে আসছিল। একপর্যায়ে ভিকটিম কালুর এসব ঘটনার কথা তার মাতাকে জানিয়ে দেয়। ভিকটিমের মাতা কালুকে ডেকে নিয়ে তাঁকে (ভিকটিম) আর বিরক্ত ও উত্যক্ত না করতে বাঁধা-নিষেধ করেন। এতে কালু তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিকটিমের ওপর বিরক্ত ও উত্যক্তের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করে। গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ভিকটিম একাকী বাড়ির পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। এ সুযোগে ওৎপেতে থাকা কালু ভিকটিমকে পিছন দিক দিয়ে জাপটে ধরে মুখ ওড়না দিয়ে বেঁধে বাঁশঝাড়ে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কারো নিকট প্রকাশ না করার জন্য তাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। গত ১৩ ডিসেম্বর ভিকটিম কালু কর্তৃক তাকে ধর্ষণের ঘটনাটি তার মাতাকে জানায়। ভিকটিমের মাতাসহ স্থানীয় লোকজন ধর্ষণের বিষয়ে কালুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে সে বাদিকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় কালু ও তার পরিবারের লোকজন স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করে কালক্ষেপন করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে ভিকটিমের মাতা ফাতেমা বেগম গত ১৪ ডিসেম্বর-২০২৪ ইং তারিখ রাতে চিরিরবন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ০৬।
এ ধর্ষণ মামলা দায়ের করার কারণে আক্রোশে গত ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে কালু ভিকটিমের বাড়ির বাইরে চর্তুদিকে খড় দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করে। ঘরে আগুন লাগার ঘটনা টের পেয়ে ভিকটিমের মাতার চিৎকারে ভিকটিমসহ তার ছোটভাই ঘর থেকে বের হয়ে আসে। এসময় তাদের চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশিরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে তাদের শরীরে দেয়া কম্বল-চাদরসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়। ভিকটিম জানায়, আগুনে আমাদের পরিবারের ৩ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, মামলা দায়েরের পর হতে আসামী গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটায় তদন্তপূর্বক আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।