ডিপসিক এর বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ

এফএনএস আইটি : | প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৩২ এএম
ডিপসিক এর বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ

চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে উন্নতমানের এআই মডেল তৈরি করেছে, যা ওপেনএআই-এর প্রধান মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। তবে ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফট-এর সন্দেহ, ডিপসিক তাদের প্রযুক্তি তৈরির জন্য ওপেনএআই-এর তথ্য ব্যবহার করেছে। একটি অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফট-এর গবেষকরা ডিপসিক-এর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছেন। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মাইক্রোসফট-এর নিরাপত্তা গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, ওপেনএআই-এর ডেভেলপার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ তথ্য চীনে পাচার করা হয়েছে। এই তথ্যগুলোর সঙ্গে ডিপসিক-এর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওপেনএআই-এর মতে, ডিপসিক তাদের এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য “ডিস্টিলেশন”পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এটি একটি সাধারণ কৌশল, যেখানে বড় ও উন্নত মডেল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ছোট মডেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে উন্নতমানের মডেল তৈরি করতে সাহায্য করে। ওপেনএআই-এর ধারণা, ডিপসিক তাদের জিপিটি মডেলগুলোর আউটপুট ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বী মডেল তৈরি করেছে, যা ওপেনএআই-এর পরিষেবা নীতিমালার লঙ্ঘন। যদিও ওপেনএআই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি, তবে তারা বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যা ডিপসিক-এর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। এই পরিস্থিতি কিছুটা বিদ্রূপাত্মকও বটে। কারণ, ওপেনএআই নিজেও তার জিপিটি মডেল তৈরির সময় সমগ্র ইন্টারনেট থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিল, যা অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কন্টেন্ট নির্মাতাদের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছিল। এখন যখন তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি অন্য কেউ ব্যবহার করছে, তখন তারা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এআই বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাক্স বলেছেন, ডিপসিক-এর বিরুদ্ধে আইপি চুরির অভিযোগ থাকা সম্ভব। তিনি বলেন, “ডিপসিক-এর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে তারা ওপেনএআই-এর মডেল থেকে জ্ঞান আহরণ করেছে এবং ওপেনএআই এই ঘটনায় মোটেও খুশি নয়।” ওপেনএআই-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা জানি, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোÑএবং অন্যান্য প্রতিযোগীরাওÑনিয়মিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এআই কোম্পানির মডেলগুলোর ডিস্টিলেশন প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সুরক্ষার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, যাতে প্রতিযোগী ও বৈরী পক্ষেরা আমাদের প্রযুক্তি হাতিয়ে নিতে না পারে।” ওপেনএআই আরও জানিয়েছে যে, তারা মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতে উন্নত এআই মডেলগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। ডিপসিক-এর বিরুদ্ধে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট-এর এই অভিযোগ প্রযুক্তি জগতে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এআই প্রযুক্তির বিকাশে তথ্যের যথাযথ ব্যবহারের নীতি এবং নৈতিকতার প্রশ্ন সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য চুরির মতো ঘটনা আরও বাড়তে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে ডিপসিক-এর বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তবে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনার চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নীতিমালার কঠোরতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW