ভাষা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নাম কাজী গোলাম মাহবুব। তিনি ছিলেন ১৯৫২ সালে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সূচনা বিকাশ ও সফল পরিণতিতে যে সকল ভাষা সৈনিকের নাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় প্রজ্জ্বলিত, তাদের মধ্যে অন্যতম কাজী গোলাম মাহবুব। ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের কারণে তাকে জেল জুলুমসহ বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে তার নামটি তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তবে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার স্মৃতি মুছে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, তার স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে গৌরনদী উপজেলা সদরে উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়কে ২০০২ সালে “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ” নির্মান করা হয়। একইসাথে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় চত্বরকে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর নামকরণ করা হয়। সেখানে একটি আধুনিক শহীদ মিনার নির্মান করে গৌরনদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে একুশ পালন করে আসছিল প্রশাসন। সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ২০১৫ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ৫২র’ ভাষা আন্দোলনে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের স্মৃতি রক্ষায় নিজ উপজেলা সদরে নির্মিত তোরণ। স্থানীয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার চাঁপের মুখে ওইবছরই ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর ও শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে প্রশাসন। ওইসময় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে মর্মে উপজেলা প্রশাসন থেকে খোড়া অজুহাত তোলা হয়েছিলো। সেসময় বলা হয়েছিলো, উন্নয়ন কাজ শেষে ভাষা সৈনিকের নামে অত্যাধুনিক তোরণ নির্মান করা হবে কিন্তু তোরণ ভাঙ্গার দশ বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যবর্ধি আর তোরণটি নির্মান করা হয়নি।
ভাষা সৈনিকের পরিবার ও ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কাজী গোলাম মাহবুবের নাম মুছে ফেলতে তোরণটি ভাঙ্গা হয়েছে। একইসাথে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বরে নির্মান করা হয়েছে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলের নামে সুকান্ত বাবু অডিটোরিয়াম। গৌরনদীবাসী অনতিবিলম্বে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের নামের তোরণটি নির্মানের দাবি জানিয়েছেন। গৌরনদী উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গৌরনদী উপজেলা চত্বরকে “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর” করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধান্তটি চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. তাহাবুব আলমের স্বাক্ষরিত আদেশে বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, ভাষা সৈনিক মৃত্যুর পূর্বে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ভাষা সৈনিকের নামের তোরণটি ভেঙ্গে ফেলাসহ চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করে। এমনকি শহীদ মিনারের পাশে কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের ফলকটি পর্যন্ত লাল রং দিয়ে মুছে ঢেকে দিয়েছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, ভাষা সৈনিকরা জাতির গর্বিত সন্তান। কোন মতেই তাদের অমর্যদা হতে দেয়া যাবেনা। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালের ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।