নওগাঁর পত্নীতলায় ভূমিহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ের প্রকল্প-২ এর ঘর বরাদ্দ প্রদানের নামে দরিদ্রদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অভিযোগ উঠেছে উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সদস্য ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. আব্দুল গাফফার এর নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বাড়ি করার মতো জমি আছে কিন্তু বাড়ি নেই এমন পরিবারে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ হাতে নেওয়া হয়। চলতি বছরে উপজেলায় এই প্রকল্প না থাকলেও আমাইড় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বাড়ি বরাদ্দ প্রদানের আশ^াস দিয়ে অভিনব উপায়ে ৫ শতাধিক গৃহহীনদের কাছে থেকে জনপ্রতি ৫হাজার থেকে ১০হাজার টাকা করে প্রায় ৫০লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। ১নং ওয়ার্ড সদস্য খাজামুদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহিম বাচ্চু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোতা মিয়া, ৬নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম চপলসহ ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করে ইউপি চেয়ারম্যান ভাগাভাগি করে খেয়েছেন বলে এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীরা অভিযোগে জানিয়েছেন। এদিকে গৃহ পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে তা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন ঘর প্রত্যাশীরা। ঘর নির্মাণ করে দিতে না পারলে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ধরণা দিচ্ছেন। সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগির সাথে কথা বলে জানা গেছে, নোদবাটি টিটি পাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল লতিফের কাছ থেকে গৃহ বরাদ্দের নামে ৫হাজার টাকা, ছয়ফুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদার কাছ থেকে ১০হাজার টাকা, পটি বক্সের ছেলে সিদ্দিকুরের কাছ থেকে ৫হাজার টাকা, মজিবর রহমানের ছেলে হেলালের নিকট থেকে ৮হাজার ৫শত টাকা, কোরবানের ছেলে শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৭হাজার টাকা, মেহের বানুর কাছ থেকে ৫হাজার টাকা, আমাইড় খামার পাড়া গ্রামের আব্দুর ছাত্তারের স্ত্রী ছকিনা বেগমের কাছ থেকে ৫হাজার টাকা, আব্দুর রহমানের ছেলে শাহিনুর ইসলামের কাছ থেকে ১০হাজার টাকা, আমাইড় মিধা পাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে সুজনের কাছ থেকে ৭হাজার টাকা, লুৎফর রহমানের কাছ থেকে ৬হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে এলাকায় অনুসন্ধানকালে এলাকাবাসী অভিযোগে আরো জানান, শুধু আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর ঘর দেওয়ার নামে অর্থ গ্রহণই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের এমন কোন সেবা নেই যা টাকা ছাড়া পাওয়া যায়। ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দের যোগ সাজেশে ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় এক ধরণের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা গ্রহণে টাকা প্রদানে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী তথা-ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সকল সেবা গ্রহণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের টাকা প্রদান করতে হয় বলেও এলাকাবাসী জানান।
এ বিষয়ে টাকা গ্রহণের দায়ে অভিযুক্ত আমাইড় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য খাজামুদ্দিন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এসব আলাপ বাদ দেন, আপনাদের কি করার আছে করেন। এ বিষয়ে ইউ পি চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কাহারো নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করিনি। আমি বিষয়টি জানার পর যারা টাকা গ্রহণ করেছে তাদের ফেরত দিতে বলেছি। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. আব্দুল গাফফার এর মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মেয়াদ ২০১৮ সালেই শেষ হয়েছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পরবর্তি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নতুন করে উপকারভোগি নির্বাচনের সুযোগ নেই। এই প্রকল্পের নামে যদি কেউ অর্থ গ্রহণ করে থাকে তবে সেটি ঠিক করেনি। ভুক্তভোগিরা প্রতিকার লাভের আশায় আমার নিকট অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আমি সংশ্লিষ্টদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলেছি। যদি ভুক্তভোগিরা টাকা ফেরত না পায় তাহলে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শরিফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।