বোরো ফসলের মাঠে এখন পাকা ধানের সোনালি হাসি। উজ্জ্বল রোদে সেই হাসি আরো ঝলমল করে উঠছে। অনেক মাঠেই কৃষক কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ তাদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হলেও কৃষকরা ধান বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। কারণ সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
পৌরসভার ফোকপাল গ্রামের কৃষক সোহাগ হোসেন জানান, তার প্রতি বিঘায় ১৩ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এবার ৪০ বিঘা জমি চাষ করেছেন। তার হিসাবে, এক বিঘা জমিতে বীজ বাবদ খরচ হয়েছে ৪৫০ টাকা, হাল চাষ ৮০০ টাকা, ধানের চারা লাগানো বাবদ ৮০০ টাকা, পানি সেচ দেয়া বাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা, সার বাবদ ৪ হাজার, কীটনাশক ২০০০ টাকা, পরিচর্যায় ১০০০ টাকা এবং ধান কাঁটা বাবদ খরচ ২ হাজার ৮০০ টাকা।
তিনি বলেন, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আশানুরূপ ধানের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাবে বিঘাপ্রতি ২০/২২ মণ ধান হতে পারে। আর প্রকৃতি যদি বিরূপ আচরণ করে সে ক্ষেত্রে কী হবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।
তিনি আরো বলেন, কৃষকের সবকিছু নির্ভর করবে ধানের বাজার মূল্যের ওপর। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজার মূল্য সন্তোষজনক হলে উৎপাদন খরচ উঠবে। আর তা না হলে কৃষকরা লোকসানে পড়বেন।
হাটলাল গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান বলেন, 'এখন যে অবস্থা গিরস্তি গিরি (চাষ করে) করে লাভ নেই। এখনো নতুন ধানের দাম জানছি না। এবার ফলন ভালোই হছে (হয়েছে)। কিন্তু কৃষকরা দাম পাম (পাব) কি না কে জানে। হামাকেরে (আমাদের) এলাকায় ধান কাঁটা শুরু হছে (হয়েছে)। আর কয়দিনের (কয়েক দিন) মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে।' প্রতিমণ মিনিকেট ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য জাতের ধান কাটতে এখনও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কাঙ্খিত দাম না পেলে ঋণের বোঝা বাড়বে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার প্রতি বিঘা বোরো চাষে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চিন্তা এখনো কাটেনি। পাশাপাশি শ্রমিকসঙ্কট রয়েছে। এখনো দেশের অন্যান্য স্থান থেকে শ্রমিকরা এসে পৌঁছাননি। আবার শ্রমিক পেলেও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মজুরি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুহাম্মদ মশিদুল হক জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে একটি পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বোরো ধানের সার্বিক অবস্থা ভাল রয়েছে। তাই এ বছরও ধানের ভাল ফলন হবে। তবে আগামি সপ্তাহ থেকে পুরো উপজেলায় ধান কাঁটা শুরু হবে।