স্টিভ রোডস বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাফল্যের স্বাদ পাচ্ছেন নিয়মিত। তবে সাফল্যের ভাগ দলকেই দেন নিয়মিত। তাঁর কণ্ঠে এর আগেও শোনা গেছে মাশরাফি স্তুতি। এবার আইসিসির ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও মাশরাফির অধিনায়কত্বের প্রশংসা করেছেন কোচ
তাঁদের দুজনের রসায়নটা চোখে পড়ার মতো। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জয়ের পর মাশরাফি বিন মুর্তজা ও স্টিভ রোডসের একে অপরকে আলিঙ্গনে বাঁধার দৃশ্য এখনো চোখে লেগে থাকার কথা। মাশরাফি সম্পর্কে নিজের মুগ্ধতার কথা আগেও জানিয়েছেন রোডস। বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজ অধিনায়ককে আরও একবার প্রশংসায় ভাসালেন কোচ। আইসিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মাশরাফি একজন যোদ্ধার মতো নেতৃত্ব দেন।
মাশরাফিকে নিয়ে দলের তরুণ খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস পুরোনো খবর। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে রোডসের কথাবার্তায় বরং নতুনত্বের স্বাদ, ‘যোদ্ধার মতো নেতৃত্ব দেয় সে। সব পরিস্থিতিতে দলকে সামনে থেকে পথ দেখায় সে, দলের সবাই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করে। সে নিজে যেটা করতে পারবে না, সেটা কখনো দলের অন্য কাউকে করতে বলে না। দলের সবাই ওদের অধিনায়কের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। এটা যেকোনো অধিনায়কের বড় একটি গুণ। আমি তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, আমাদের সম্পর্কের উন্নতির জন্য কাজ করি। দুজনের রসায়নটা বেশ কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ এখন দুই অধিনায়কের যুগে প্রবেশ করেছে। রোডস তাই মাশরাফির পাশাপাশি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক সম্পর্কে ইংলিশ কোচের মূল্যায়ন, ‘সাকিব ও মাশরাফি ভিন্ন ধরনের অধিনায়ক। সাকিব একজন ট্যাকটিকাল অধিনায়ক, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান। কোন মুহূর্তে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটা সে খুব ভালো জানে। দুজনের সঙ্গে তাই আমাকে ভিন্নভাবে কাজ করতে হয়। নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা ওরাই করছে, আমার কাজ শুধু দলকে সঠিক পথে রাখা।’
বিশ্বকাপের আগেই ওয়ানডেতে অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছেন সাকিব। ব্যাটে বলে সমান কার্যকরী এমন একজন খেলোয়াড় যেকোনো দলের জন্যই আশীর্বাদ। সাকিবকে দলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মানছেন রোডসও। তবে কোনো কারণে সাকিব না থাকলেও যে হাল ধরার মতো খেলোয়াড় এই বাংলাদেশ দলে আছে, সেটিও যেন আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাইলেন রোডস, ‘ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিবের বদলে মোসাদ্দেক এল, ২০ এর একটু বেশি (২৪ বলে) ৫০ এর বেশি রান করল। সে সাকিবের বদলে এসে সাতের মধ্যে নেমেছে, স্পিনও করেছে। ফলে সাকিবকে ছাড়াই সেদিন আমরা খেলতে পেরেছি।’
রাউন্ড রবিন ফরম্যাটের এই বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে উঠতে গেলে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করা জরুরি। মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটাও তাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। রোডস বলছেন, বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসের কোনো কমতি নেই তাঁর দলে, ‘ড্রেসিংরুমের সবাই দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তবে আমরা এটাও জানি, আমাদের দুর্দান্ত কতগুলো দলের মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রতিপক্ষকে সমীহ করি, তবে ভয় পাই না।’
রোডস বিশ্বাস রাখেন বিশ্বকাপে বাকি দলগুলোকে চমকে দেওয়ার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের, ‘আন্ডারডগ হওয়াটা কিন্তু খারাপ কিছু নয়। আমরা যদি বড় দলগুলোকে চমকে দিতে পারি, সবাই তখন আমাদের নিয়ে কথা বলবে। কীভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কথা বলবে। আমাদের শুধু চাপ সামাল দেওয়াটা রপ্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় বছরখানেক হতে চলেছে। তাঁর অধীনে ওয়ানডেতে আরও সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমদের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়েছেন, আইসিসির কাছে সেটিও বলেছেন রোডস, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ওয়ানডেতে দলটা সঠিক পথে ছিল। আমাকে উন্নতির সেই ধারাটা অব্যাহত রাখতে হতো। ওদের সঙ্গে কাজ করতে আমার স্বভাবগত কোচিং স্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। কখনো কখনো কিছুটা কঠিন মনে হতো, তবে এই দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। ওদের ওপর আপনি নিশ্চিন্তে দায়িত্ব দিতে পারবেন। আমি ওদের সমর্থন করার চেষ্টা করি, ওদের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনার চেষ্টা করি।’