বর্ষা আসতে না আসতে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে দুই উপজেলার ১০টি নতুন এলাকার হাজার হাজার মানুষের বসত বাড়ি। লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ও তীর রক্ষা বাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে জোরালো আন্দোলন। রোববার দুপুরে ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে কমলনগরের হাজিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল অংশ নেন বিপুল সংখ্যক জনতা। ঈদের পরদিন থেকে ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও ভিটামাটি রক্ষায় বিক্ষোভ মিছিল,মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। দ্রুত বেড়ি বাঁধ সংস্কার করে রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় বসবাসকারী লক্ষ জনতার স্বপ্নসাধ ও বসত বাড়ি রক্ষা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এ কারণে গত এক বছর বাঁধে ৭ বার ধ্বস নামে। ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে নতুন করে বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বার বার বাঁধে ধ্বস নামছে।
এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধ্বস দেখা দেওয়া আতঙ্কে রয়েছে কমলনগর উপজেলার দু-লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধ্বস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করে কমলনগর উপজেলা বাসীকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ। এদিকে নদী ভাঙ্গন রক্ষা ও বাঁধ নির্মানের দাবীতে ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে ঈদের পর থেকে তিন দিন ধরে সমাবেশে ও মিছিল অব্যাহত রেখেছেন। সংগঠনটির আহ্বায়ক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার ফলোয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতলব, রাকিব হোসেন, দিদার হোসেন প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানান,গত দু’মাসের মধ্যে কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ধসে দক্ষিণ অংশের প্রায় দ’ুশ মিটার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরো বাঁধ। বাঁধে কয়েক বার ধসসহ নতুন করে আবার বাধে ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে কমলনগর উপজেলার দু-লক্ষাধিক মানুষ। নদীর তীর রক্ষা বাধেঁ এ ধস দেখা দেয়ার কারণ হিসেবে বাঁধ নির্মাণের অনিয়মে বারবার বাধেঁ ধসের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এসব অভিযোগ অস্বীকার কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছেন অধিক ¯্রােতের কারণে বাধেঁ ধস দেখা দিয়েছে। এ ধসের কারণে পুরো বাধঁই এখন হুমকির মুখে। বাধঁ রক্ষায় কাজ চলছে। বর্ষা না আসতে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে ঘর বাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নতুন করে বসতবাড়ি হারিয়ে ১০ হাজার মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
জানাগেছে,লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ রয়েছে। মেঘনার ভয়ঙ্কর থাবায় ইতোমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা না আসতে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, মাতব্বরহাট, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার বাংলা বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী ও বড়খেরীসহ ১০টি এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা। আর ভেঙ্গে গেছে নবীগঞ্জ,সাহেবের হাট,চর লরেঞ্জ, কাদির পন্ডিটের হাট, তালতলী,মাতাব্বর হাট, তুলাতলীর এলাকার ৫০ ভাগ এলাকা।
হুমকির মুখে রয়েছে রামগতি ও কমলনগর হাসপাতাল,আলেকজান্ডার বাজার ও সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি,ফসলি জমিসহ নানান গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও সম্পদ। সম্প্রতি ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে বেড়ি বাঁধ রক্ষা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধের দাবীতে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ সংগঠনটির আহ্বায়ক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার ফলোয়ানের জানান,দ্রুত নদী বাঁধ দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ মাষ্টার জানান,তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে জোয়ারের পানিতে ফসলাদি তলিয়ে যায়।
কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পি জানান, তীর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। বর্তমানে ধ্বসে যাওয়া বাঁধসহ নতুন আরও ৪শ মিটার বাঁধের টেন্ডার হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জানান, রামগতি থেকে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ১৭শ ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। তবে বর্তমানে নদীতে ধ্বসে যাওয়া অংশ সহ নতুন করে আরও ৪শ মিটার বাঁধের মেরামতের টেন্ডার হয়েছে।