চট্টগ্রামের সব জায়গায় ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। শহর কিংবা গ্রামেও একই অবস্থা। আর এসব ফার্মেসিতে অভিযান চালালেই মিলছে মেয়াদোত্তীর্ণ নানা ওষুধ। ভোক্তারা এসব ওষুধ কিনে একদিকে যেমন প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন আইনত দ-নীয় অপরাধ। এরপরেও কতিপয় অসাধু ওষুধ কোম্পানি এবং ফার্মেসি ব্যবসায়ী অর্থের লোভে ওই ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একাধিক সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে ফার্মেসি এবং ওষুধ কোম্পানিগুলো। তবে তা কতটুকু কার্যকর হবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। সেই সাথে দেশে কার্যকর ওষুধ বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলে নিয়মিত মনিটরিং ও বিশেষ সক্রিয়তার ধারাবাহিকতা জরুরি বলে মন্তব্য করছেন শহরের ভোক্তা সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ওষুধ যেমন জীবন রক্ষা করতে পারে, তেমনিভাবে একই ওষুধ নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জীবনহানিও ঘটাতে পারে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে চামড়ার ওপর মারাত্মক এলার্জি সৃষ্টিসহ কিডনি ও লিভার নষ্ট হতে পারে। মস্তিষ্কের প্রদাহে অজ্ঞান হয়ে মারাও যেতে পারে।
দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন কোনো স্তরেই সরকারি পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাবিহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করেন ভোক্তারা। অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের গায়ে নতুন করে মেয়াদ সম্বলিত স্টিকার লাগিয়ে তা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে বহু।
গত এপ্রিল এবং মে মাসে চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড, বন্দর, ডবলমুরিং, বায়েজিদ, অক্সিজেন, সদরঘাট, কোতোয়ালী, হালিশহর, আকবরশাহ, খুলশি, পাঁচলাইশ, জুবলী রোড় ও চকবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় ওষুধ প্রশাসন তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় এসব এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন ওষুধ পাওয়া যায়। এ অপরাধে অধিদপ্তর ফার্মেসির মালিককে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানাও করেছেন।
বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. শফিউল আজম সাংবাদিকদের বলেন, যারা মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে বাণিজ্য করছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। তাছাড়া এ ধরনের অপরাধ কর্মকা-ের সৃষ্টির মূল কারণ হলো সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকিতে দীর্ঘসূত্রতা।