ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলে বন্যা দুর্গত পরিবারগুলো গত ক’ দিন ধরে পানির মধ্যে ভাসছে। ঘরের মধ্যে পানি, উঠোনে পানি, রাস্তাঘাট সহ মাঠঘাটে অথই পানি। আর কন্যার পানির সাথে ¯্রােতের তালে কচুরী পানার সাথে সমান তালে ভেসে বেড়াচ্ছে চন্দ্রবোড়া সাপ। ফলে পানির মধ্যে বসবাসরত দুর্গত পরিবারের দুর্ভোগের মধ্যে সর্প আতঙ্ক আরেক দুর্ভোগে দিশেহারা হয়ে পড়ছে বানভাসিরা। শনিবার উপজেলা পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বিপদ সীমার ৬৬ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে চরাঞ্চলে বানভাসি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব। ইতোমধ্যে উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের সেলিম হোসেন (৩৫) ও মিয়াজান ফকির (৪৮) নামক দুই বানভাসি ওই সর্প দংশনের শিকার হওয়ার পর পার্শ্ববতী দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
শনিবার উপজেলার বন্যা সদুর্গত এলাকাগুলো ঘুরে জানা যায়, উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের মাঠী জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৭৩০টি পরিবার বন্যার পানির মধ্যে ভেসে ভেসে জীবন যাপন করছে। ওই ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় পদ্মা নদীর বন্যার পানি সরাসরি আঘাত হানছে বসতি পরিবারে। প্রতিটি বানভাসি পরিবারের বসত ঘরের মধ্যে বাঁশের চালা তৈরী করে নারী পুরুষ শিশু কিশোর ও বৃদ্ধরা দিনানিপাত করছেন। চরাবাসী তাদের নিত্যদিনের হাট বজার ও পারিবারিক কার্যাবলী নৌকা ও ট্রলারযোগে সম্পন্ন করে চলেছেন। মসজিদগুলো পানিতে ভেসে যাওয়ার ফলে মুসুল্লিরা নৌক্,া ভেলা বা বাড়ীতে বাশের মাচা বেঁধে নামাজ আদায় করে চলেছেন। ওই ইউনিয়নে কর্মহীন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অন্ততঃ ৩শ’ দিন মজুর। ফরে দুর্গত পরিবারগুলো দিনে এক বেলা বা আঁধা বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বানভাসি পরিবারের টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরাঞ্চলে চলছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এতে বেশীরভাগ পরিবার পদ্মা নদীর বন্যার পানি পান করে চলেছেন। অনেক পরিবারে সর্দিজ¦র সহ ভাইরাস জ¦রের প্রাদুর্ভাব লেগে আছে।
জানা যায়, ওই ইউনিয়নের পদ্মা নদী সংলগ্ন চর কালিকাপুর মৌজা, চর গোপালপুর, চর কল্যানপুর মৌজা, ছাহের মোল্যার ডাঙ্গী গ্রাম, শহর মোল্যার ডাঙ্গী, রেজু চৌকদার ডাঙ্গী, উত্তর নবাবগঞ্জ ও চৌধুরী ডাঙ্গী গ্রাম সহ চরমির্জাপুর মৌজাগুলো নি¤œাঞ্চল হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি রুদ্র মুর্তির আকার ধারন করেছে। চরকালিকাপুর মৌজার এক বানভাসি জব্বার বেপারী জানায়, “ দেশে কতই না উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু অবহেলিত এ পদ্মার চরে একটি বেড়িবাঁধও নির্মান করা হয় নাই। ফলে বছরে প্রায় ৪ মাস পানির মধ্যেই বসবাস করতে হয় তাদের। তিনি আরও বলেন, গত ক’দিন ধরে এলাকার সব মাঠী জমি ডুবে গেছে। ফলে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই টাকার অভাবে বাজার করতে না পেরে ছেলে পেলে নিয়ে কোনোমতে নুনভাত খেয়ে বেঁচে আছে তার পরিবার”। আরেক বানভাসি ফুলজান খাতুন বলেন, “ পানিতে বসত ঘরগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে পরিবারের শিশু বৃদ্ধ ছাড়াও গরু ছাগল হাঁস মুরগী নিয়ে আরও বিপাকে রয়েছে বানভাসিরা। তিনি বলেন, “ মানুষের রোগ বালাই হলে মুখে বলতে পারে কিন্তু গৃহপালিত পশু পর্যাপ্ত খাবার ও সঠিক চিকিৎসা না পেলে সবার অজান্তেই মারা যাবে। তাই বাড়ীর গরু ছাগল নিয়ে পদ্মা পারে চরমঈনুট পাকা সড়কের ধারে আশ্রয়ণ গেড়ে রাতভর পাহারা দিতে হচ্ছে বলেও তিনি জানান”। ওই ইউনিয়নের চর কল্যানপুর মৌজার গরু খামার মালিক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, “ পদ্মা চরাঞ্চলের সব জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। একদিকে জীবন বাঁচানোর তাগিত অন্যদিকে যত্রতত্র সাপের উপদ্রব আর রাত হলেই জেগে থাকতে হয় চোর ডাকাত আতংকে। সব মিলিয়ে চলতি বন্যা পরিস্থিতি চরবাসীর জন্য বছরের এক ভয়াবহ সময় কাটছে বলে তিনি জানান”। আর ওই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন মৃধা বলেন, বানভাসি পরিবারের প্রতিটি দুর্ভোগ তাৎক্ষনিকভাবে আমি প্রশাসনকে অবগত করে চলেছি। হয়তবা দু’এক দিনের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরন বড়ি ও পানি সংরক্ষনের জন্য ক্যান, খাবার স্যালাইন সহ ত্রাাণ সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হবে”। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, “ আমি সব মসয়ই উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়ন, চরহরিরামপুরর ও গাজীরটেক ইউনিয়ন সহ সদর এলাকা কড়া নজদারীতে রেখেছি। রবিবার ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে প্রথমে বানভাসি দুর্গত এলাকায় ত্রান সামগ্রী পাঠানো হবে”।