পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দক্ষিণ এশিয়ার একটি বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক দিক থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চলের অধিকার নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ বছরের। সম্প্রতি আসামে মুসলিমদের জন্য বিশাল আকারের ‘বন্দিশিবির’ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইতোমধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৫ আগস্ট জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ অনুচ্ছেদটি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছে ভারত।
ভারত সরকার সবসময়ই জুলুমবাজ ও ‘আঞ্চলিক বড়দাদা’র মতো আচরণ করে থাকে। কিন্তু বুঝতে হবে পাকিস্তানও পরমাণু শক্তিধর দেশ। যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বা আনবিক বোমা ব্যবহার করে, ‘আমাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে’ জাতীয় হুঙ্কার ছেড়ে সমস্যা মিটবে না। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের দমনে ভারত রণকৌশলগত বন্ধু ইজরাইলেরও সহযোগিতা নিচ্ছে। গত বছরের ৩০ জুলাই ভারতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে আসামের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয়া হয়। আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ এ তালিকা প্রকাশ করে।
আসামে মুসলিম বন্দিশিবির নির্মাণ ও কাশ্মীরে গণ-গ্রেপ্তারের পৃথক দুই ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য প্রমীলা জয়পাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাশ্মীরে দুই হাজার মানুষকে ভারত সরকারের গ্রেপ্তারের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আসাম ও কাশ্মীরের মুসলিমদের জন্য বিশাল আকারের বন্দিশিবির নির্মাণে ভারত সরকারের শীর্ষ পরিকল্পনার অংশ এটি।’ মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গোলা-বারুদ এবং প্লেটগানের গুলিও কাশ্মীরিদের দমন করতে পারছে না। ভারতের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের জনগণ উপত্যকাজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। ভারত সরকারের ‘কাশ্মীর শান্ত’ থাকার দাবির কথা উল্লেখ করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং সেখানকার ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে বিজেপি সরকারের দাবির কোনো মিল নেই।’ গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী গোলাবর্ষণ ও প্লেটগান থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ভিডিওতে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওর ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে প্লেটগানের গুলি ও গোলাবর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে বলে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে।
বর্তমানে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই কাশ্মীরের হাজার হাজার মানুষকে আটকে রাখা ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
কাশ্মীরকে রাজনৈতিক বন্দিশিবির বানানোর সুযোগ না দেয়ার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান। গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি কাশ্মীরিদের দুর্দশার প্রতি মনোযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
একটি স্বচ্ছ প্রস্তাবনাই কাশ্মীর সমস্যা সমাধান এবং এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি এনে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছারভিত্তিতে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।