মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিকদের নেওয়া নানা প্রতিশ্র“তি ও প্রলোভন দেখিয়ে। পরবর্তীতে সেখানে তাদের বেশির ভাগকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। অনেকেই ফিরে আসছেন লাশ হয়ে। যেগুলোর অধিকাংশই আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানো হয়। বাস্তবে কী ঘটেছিল, তা জানার কোনো পথ থাকে না। বিদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অনেক দিন ধরেই বিষয়টি তুলে ধরছে। নির্যাতনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
সৌদি আরবের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতনের অভিযোগের মধ্যে আরও ৬৪ জন নারী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে, আশ্রয় নেয়া এই নারীদের গত ২৬ আগস্ট ফেরত পাঠানো হয় বলে ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা ‘স্বেচ্ছায়’ দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিল। তাই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ ভাগ্যবদলের স্বপ্ন ও অনেক আশা নিয়ে যারা বিদেশে গেলেন; দেশে স্বজনদের কাছে অনেক টাকা পাঠাবেন; সংসারে সচ্ছলতা ফিরবে; আসবে সুদিন; তারা নানা নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে কেন কথিত ‘স্বেচ্ছায়’ দেশে ফিরতে চেয়েছেন। এ প্রশ্নের জবাব কার কাছে?
সৌদি আরবে ১০০ জন পুরুষ কর্মী পাঠালে যে লাভ হয়, ২০ জন নারী কর্মী পাঠালে তার সমান লাভ হয়। সৌদি মালিক ১ হাজার ৭০০ ডলার অগ্রিম দিয়ে গৃহকর্মীদের কাজের জন্য নিচ্ছেন। দূতাবাস সূত্র জানায়, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই দেশের মালিককে আরেকজন নারী শ্রমিক পাঠাতে হয়। অথবা নারী শ্রমিককে নেওয়ার জন্য মালিক যে টাকা দিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করতে হয়। ফলে নারী শ্রমিকেরা বিপদে পড়লে তখন আর রিক্রুটিং এজেন্সিকে পাশে পাচ্ছেন না।
বিদেশে গৃহকর্মীর কাজে গিয়ে নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন, এ ধরনের উদাহরণ খুবই কম। নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীদের অনেকে পরিবারের কাছে যেতে চান না। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হয় তাদের। গৃহকর্মী নারীদের কেউ ফিরেছেন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়, কারও শরীরে আঘাত ও যৌন নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে। ফেরত আসা নারী গৃহকর্মীদের জন্য সরকারের কোনো পুনর্বাসন কার্যক্রম নেই। বিমানবন্দরে নেমে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের কাছে কোনো নারী নির্যাতনের কথা জানালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো বা বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর বাইরে তাদের জন্য সরকারের আর কোনো উদ্যোগ নেই।
ফেরত আসা নারীদের আর্থিক সহায়তার সাথে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। প্রতারণার দায়ভার কেবল দালালদের কাঁধে দেওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রকে এর দায় নিয়ে, কোথায়, কীভাবে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তা খুঁজে সমাধান বের করতে হবে।