রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার পুলিশ বক্সের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের গাড়িবহরে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অপরজন ওই স্থানে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ সময় গাড়িতে থাকলেও তার কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দাবি করেছেন, দুর্বৃত্তরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি পুলিশ বক্সকে টার্গেট করেই বোমা হামলাটি ঘটায়। বরাবরের মতো এ ঘটনাতেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এদিকে, পুলিশের ওপর বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রচারকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আইএস।
এ ঘটনার তিন মাস আগে রাজধানীতে একইরকম আরেকটি হমালার ঘটনা ঘটে। ঢাকার মালিবাগে পুলিশের একটি গাড়ির কাছে বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুইজন আহত হন। সেদিন রাতে মালিবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ির কাছে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক বিভাগের একজন নারী এএসআই পায়ে এবং একজন রিকশাচালক মাথায় আঘাত পান। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনারও দায় স্বীকার করে আইএস। আর যেখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তার পাশেই রয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখার কার্যালয় (এসবি) প্রধান কার্যালয়। এরকম একটি জায়গায় এবং সরকারের একজন মন্ত্রীর চলার পথে হামলার ঘটনা মোটেই তুচ্ছ ব্যাপার নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন দেশের বাইরে থেকে কিভাবে এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে? প্রতিনিয়তই শোনা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অনেক ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছে। সয়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় হামলার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেও সদরঘাট থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়, যারা ‘আনসার আল ইসলাম’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছিল। এছাড়া প্রায়শই দেখা যায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ভরন ঘেরাও করে রাখে এবং সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি সেখান থেকে কাউকে কাউকে আটকও করা হয়। যাদের আটক করা হয় তাদের কাছে কি এমন তথ্য পাওয়া যায় না, যে এসব ঘটনার নেপথ্যে বাংলাদেশের কারা জড়িত এবং এদের পৃষ্ঠপোষক কারা?
এর আগে গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলায় হতাহতের ঘটনায় সারা বিশে^র কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছিল। তারপর থেকে সরকার অনেকটা নড়েচড়ে বসে। জঙ্গিদের দমনে অভিযান বাড়ানো হয় এবং নানাভাবে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। কিন্ত আমরা দেখছি এতে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম চলছেই। তাই গুলশানের মতো ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় জঙ্গিদের শুধু দমন করলেই হবে না, এর মূলোৎপাটন করতে হবে।