ভারতের আসামে গত শনিবার প্রকাশিত চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়া এ মানুষগুলোর সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা মূলত অতি দরিদ্র এবং বেশিরভাগই মুসলমান। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এর আগে বেশ জোর দিয়েই ‘অবৈধ মুসলমান অভিবাসীদের’ বাংলাদেশে বিতাড়নের কথা বলেছিল।
ভারতের মতো প্রতিকূল পরিবেশ ও হিন্দু-প্রধান আসামের মতো জায়গায় বাংলাদেশের মুসলমানদের যাওয়ার কোনো কারণ আছে কী? যেখানে মুসলমানরা কখনোই স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম-কর্ম, উৎসব পালন, এমমনকি গরু জবাই পর্যন্ত করতে পারে না। স্বাধীনতার পর মুসলমানরা ভারতে গেছে এটি সম্পূর্ণই অবাস্তব কথা। বরং এটাই বাস্তব হতে পারেÑ স্বাধীনতার পর ভারত থেকে কতিপয় মুসলমানরা বাংলাদেশে এসেছে। যদিও ইতোপূর্বে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর বলেছেন, ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’। কিন্তু শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়, যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলেন এবং বাদপড়া লোকগুলো ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করেন। যাই হোক, বাংলাদেশের সজাগ থাকতে হবে। কারণ অমিত শাহ ও তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে এই লোকগুলো বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসুক, এটাই কখনোই কাম্য হতে পারে না।
যদিও রাজ্য সরকার বলেছে, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা এখনই বিদেশি বলে গণ্য হবেন না। এজন্য আগামী ১২০ দিনের মধ্যে তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে হেরে গেলে হাই কোর্ট এবং সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। যদিও ভারতের দীর্ঘমেয়াদী বিচার ব্যবস্থার উপর প্রতিটি আদালতেই সাধ্যের অতিরিক্ত মামলার বোঝা ও ভূক্তভুগিদের অর্থনৈতিকভাবে মামলা চালানোর সামর্থের বিষয়টিও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এনআরসি কর্তৃপক্ষ মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে তালিকা তৈরি করেছে। এনআরসির প্রধান প্রতীক হাজেলা বিবিসির কাছে স্বীকারও করেছেন, যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা ভিন্ন ধর্ম ও গোষ্ঠীর মানুষ। তালিকা থেকে বাদ পড়া লোকের কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে, কাছের অফিস বাদ দিয়ে, হয়রানি ও পেরেশানির জন্য বহু দূরের অফিসগুলোতে গিয়ে। নাগরিকপঞ্জি থেকে নাম বাদ পরা মানুষগুলো নাগরিকত্ব প্রমাণের দীর্ঘ এবং জটিল আপিল আবেদন প্রক্রিয়ায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার এবং মামলায় লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে পাবে সেটাও বড় প্রশ্ন।
আসামে যুগযুগ ধরে বসবাসরত শান্তিপ্রিয় স্থায়ী মুসলমানদের বিতাড়নের নামে ১৯৮৩ সালে উগ্র ফ্যাসিবাদী মানসিকতার চরমপন্থী ও কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করে ২ হাজার সন্দেহভাজন কথিত অবৈধ অভিবাসীকে হত্যা করে। আসামের বর্তমান হাস্যকর নাগরিকপঞ্জি প্রকাশে বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে। অতীতে, ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে অনেককে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ভারত। তাই এবারও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে।