নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের এদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মানবিকতার কারণে এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। অথচ তারপরও তারা এইদেশে নানা অপকর্ম চালাচ্ছে। মাদক কারবার, সন্ত্রাস, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, ডাকাতিসহ নানা অভিযোগ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। আর তাদের এসব কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এদেশেরই কিছু মানুষ। তারই একটি উদাহরণ রোহিঙ্গাদের স্মার্টকার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র- এনআইডি) দেওয়া।
কিছুদিন আগে লাকী নামের ৩২ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নাম-ঠিকানা দিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেন। অবাক করার মতো হলেও সত্য, যে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাঁর সেই ভুয়া নাম-ঠিকানাও সংরক্ষিত ছিল। এটি কীভাবে সম্ভব তা বুঝতে পারছিলেন না খোদ নির্বাচন কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নুর মোহাম্মদ নামে এক রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হন। তিনি মিয়ানমারের আকিয়াব এলাকার কালা মিয়ার ছেলে। তিনি টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশে তাঁর চারটি বাড়িও রয়েছে। সম্প্রতি তাঁর মেয়ের কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির বেশি স্বর্ণ ও নগদ কয়েক লাখ টাকা উপহার সামগ্রী হিসেবে জমা পড়ে। ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, নুর মোহাম্মদের কাছে বাংলাদেশের একটি স্মার্টকার্ড ছিল। সেখানে তার নাম ছিল নুর আলম। গত ২২ আগস্ট রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, একদল রোহিঙ্গা ফারুককে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাড়াও এই রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদ আরও কয়েকটি মামলার আসামি ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী এই দাগী আসামিকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছে কে? এর সাথে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের কর্মী এবং কোনও প্রভাবশালীর ছত্রছায়া রয়েছে। নইলে একজন উদ্বাস্তুর পক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে মনে করি। এভাবে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তথা নাগরিকত্ব দেওয়া দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা এই এনআইডি ব্যবহার করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দেশের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছে। এতে বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে।
রোহিঙ্গদের অবৈধভাবে স্মার্টকার্ড পাওয়ার ব্যপারটি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে বের করতে হবে এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা স্মার্টকার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। কোন কোন অফিস থেকে এসব কার্ড ইস্যু করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।