আমরা সবিনয়ে বলতে চাই, এবং বুঝতে চাই, অর্থের লোভে শিক্ষকরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় রাজি হচ্ছেন না, এ ধারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। শিক্ষকরা লোভী এবং ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের কোনো মায়া নেই, তাও মিথ্যা। অনেকেই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ অসম্মতির কারণ হচ্ছে অর্থলিপ্সা। এ নিয়ে পত্রপত্রিকাসহ স্যোশাল মিডিয়ায় দেখা গেছে বিভিন্ন অরুচিকর কটুকথা। টাকাই বড় কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এসব প্রতিক্রিয়াকে আমলে নিতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বিপক্ষেরও যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের জন্য ডোর টু ডোর ছুটোছুটি করা যে কত কষ্ঠসাধ্য তাও চিন্তা করতে হবে। দেশের এক প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে যান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। বিশেষ করে, উচ্চশিক্ষায় আকাঙ্খী মেয়েদের সময়ের সাথে সমন্বয় করে, একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার বিড়ম্বনার সাথে চরম আবাসন সংকটে পড়তে হয়।
বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ইতিমধ্যে আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় সম্মত হয়েছে। বুয়েট ইচ্ছে করলেই নেতৃত্ব দিতে পারে অন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাথে নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার, যা অনেকের অনেক দিনের দাবি। জানা যায়, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিরোধিতা করার মূল কারণ ফরম বিক্রির টাকা। ভর্তি ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোটি কোটি টাকা আয় করে থাকে।
এ বছর মেডিকেল ও বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা পরপর দুই দিনে হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ৪ অক্টোবর দেশের ১৯টি কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষা। এক দিন পর ৫ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা। এর ফলে যারা ঢাকার বাইরের কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষা দেবেন, যাতায়াতসহ বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকের বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হলো, বুয়েট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘অনেক আগেই বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে। বিষয়টি মেডিকেল কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত ছিল। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখন নতুন কিছু বলা যাবে না।’ অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, ‘এখন তাদের কিছুই করার নেই’। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা না ভেবে, বুয়েট ও মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের এরকম দ্বিমুখী বক্তব্য কাম্য নয়। বিষয়টি দুই কর্তৃপক্ষেরই পুনরায় ভাবা উচিত।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিন্তাশীল যোগ্য লোকের অভাব নেই। আমাদের বিশ্বাস, এ চিন্তাশীল মানুষগুলো যদি খোলা মনে সচেষ্ট হন; তবে শুধু ভর্তি সমস্যা নয়, দেশের অন্য অনেক সমস্যারও সুন্দর সমাধান সম্ভব। শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ, সবাই মিলে আমাদের সন্তানদের স্বার্থে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করুন।