দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই বড় মাপের এক মহৎ ও সাহসী উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ছিলো আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগ ও দারিদ্র্যবিমোচন করা। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্যে ছিলো, ২ লাখ ৫০ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন। এ জন্য ৩,৯৫০টি পাকা ব্যারাক নির্মাণ, ৫,৪০০টি সিআই শিটের ব্যারাক, ৫,২৭০টি সেমিপাকা ব্যারাক, নিজ জমিতে ৩,৭১০টি সেমিপাকা ঘর ও ১,৬৬,২৯০টি সিজিআই শিটের সিঙ্গেল ঘর নির্মাণ। এছাড়া কক্সবাজারের খুরুশকুলে ২০টি ছয়তলা ভবন নির্মাণ, বিভাগীয় সদর, জেলা, উপজেলা সদর ও পৌরসভা এলাকায় ৫০টি বহুতল ভবন, ৯০০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৩৯টি ঘাটলা, ২০টি টং ঘর, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ১৪ হাজার ৮৯০টি অগভীর এবং এক হাজার ৩৮১টি গভীর নলকূপ স্থাপন। শুধু তাই নয়, সুফলভোগীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মকর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ৮০ হাজার জনকে সমবায় ঋণ দেয়ারও কথা রয়েছে।
আর্তমানবতার সেবায় দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র জনগণকে পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সাহসিকতাপূর্ণ এ কাজ শুরু হয়েছে ২০১০ সালে। ভালো সুবিধাদির বিষয় চিন্তা করে আশ্রয়ণ-২ নামে প্রকল্পটি কয়েকবার সংশোধনও করা হয়। এর মেয়াদও গত জুনে শেষ হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করার কথা। মাঝপথে গেছে ৯ বছর, তারপরও হয়নি বাস্তবায়ন। বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৬১ শতাংশ হলেও, কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে ৩৯ শতাংশ। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি কার্যকর করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১৪টি বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের এতোগুলো বিভাগকে দায়িত্ব দেয়ার পরও নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে ইতোপূর্বে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করে ৩ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে, অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
জানা যায়, পুনর্বাসন প্রকল্পের দায়ীত্বশীলদের বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয়হীনতা, ঢিলেমি, অনীহা বা যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায়, সুবিধাভোগীদের সুফল পেতে কালহরণ হয়েছে ৯ বছর। দেশের সার্বিক দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা ও প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিধায় সরকার চলতি অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দও দিয়েছে।
একথাও ঠিক যে, সংশ্লিষ্টদের সময় বাড়ানোর ব্যাপারে সুদির্দিষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্টের কথা চিন্তা করে, আয়বর্ধক কার্যক্রম, দারিদ্র্যবিমোচন ও পুনর্বাসনের যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন; উন্নয়ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার সাথে তাদের চিন্তাকে যোগকরে দায়ীত্বশীলতার সাথে বাকী কাজ শেষ করবেন বলে আমরা আশা করি।