পেঁয়াজের উর্দ্বগতি মূল্যে এবার পেয়াঁজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। রাজবাড়ীর পদ্মা পাড়ের গোয়ালন্দে এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভাল ফলন হয়েছে। দাম ভাল থাকায় এ এলাকার পেঁয়াজ চাষী পরিবারে এখন আনন্দ বইছে। তবে নতুন পেঁয়াজ উঠার সাথে সাথে কিছুটা কমতে শুরু করেছে বাজারে পেঁয়াজের দাম। আর কৃষি বিভাগ বলছে, একই জমিতে দুই বার পেঁয়াজ আবাদ করে পদ্মা পাড়ের কৃষকেরা অধিক লাভবান হচ্ছে। তবে এই দাম আগামীতে না পওয়ার সম্ভাবনাও তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ভাল ও উন্নত জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানিতে ডুবে যায় নদী তীরের বেশীর ভাগ এলাকা। এক দিকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আশির্বাদ স্বরূপ রেখে যায় উর্বর পলি মাটি। এ মাটিতেই পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার উৎপাদন করে পদ্মাপাড়ের কৃষকরা। গোয়ালন্দে তিন ধরনের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। মুড়িকাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। জেলার কৃষকের ঘরে এখন উঠছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। পেঁয়াজের ফলন ও ভাল দাম পাওয়া খুশি কৃষক-কৃষানীরা। চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মাথায় কৃষকেরা এখন ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছে। বসে নেই কৃষানীরাও। তারাও কৃষকের পাশাপাশি ক্ষেত থেকে উঠানো পেঁয়াজ পাতা কেটে বাজারে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মহিদাপুর চরে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজের ক্ষেত। একদিকে মুড়িকাটা পেয়াজ তুলছেন কিছু কৃষক। আর সেই পেঁয়াজের পাতা ছাড়িয়ে বিক্রি উপযোগী করছেন কৃষানী ও পরিবারের ছোট ছোট সদস্যরা। অপরদিকে দানা পেঁয়াজসহ অন্যন্য পেঁয়াজ ক্ষেতের পরিচর্যার ব্যাস্ত কৃষকরা। তেমন কোন রাস্তা না থাকলেও ট্রাক নিয়ে সরাসরি জমিতে পৌঁছে গেছেন অনেক পেঁয়াজ বেপারী। তারা সরাসরি জমি থেকে কৃষকের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন।
কৃষক আ. হামিদ মোল্লা জানান, গতবছর পেঁয়াজ চাষ করে লাভ হয়নি। ফলন ভাল হলেও পেঁয়াজের দাম ছিলনা। ফলে ক্ষতির মধ্যে পড়েছিলাম। কিন্তু চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ভাল হয়েছে। বাজারে ভাল দামও ভাল আছে। তবে দাম অব্যাহত থাকলে তাদের সুবিধা হয় বলেও জানান।
উপজেলার চর দৌলতদিয়া এলাকার কৃষক বারেক সিকদার জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পিয়াজের আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মোট ৬০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি পিয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। বর্তমানে ২ হাজার টাকা মন বিক্রি করছেন। আশা করছেন অন্তত ১শ মন পেঁয়াজ তুলা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার টাকার পেঁয়াজ কলিও তিনি বিক্রি করেছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহা. মোহায়মেন আক্তার বলেন, এ উপজেলায় তাহেরপুরী ও লাল জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ বেশী হয়। চলতি মৌসুমে গোয়ালন্দে ১৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন হবে অন্তত সাড়ে ৩শ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। এবছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজারে বেশী দাম পাচ্ছে কৃষক। এছাড়া পেঁয়াজের ফলন বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করাসহ বিশেষ নজরদারী করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।