গতবছর এক হাজারের বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিমাসে গড়ে ৮৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সার্বিক নির্যাতন কমলেও শিশুদের যৌন নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পর্যালোচনা করে তাদের এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তারা জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৩৮১ শিশু নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮টি শিশুর অপমৃত্যু এবং ১ হাজার ৩৮৩ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা কমলেও যৌন নির্যাতনের হার বেড়েছে ৭০.৩৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে শিশু নির্যাতনকে ৬টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো, অপমৃত্যু, যৌন নির্যাতন, অপহরণ, নির্যাতন ও সহিংসতা,আঘাতে মৃত্যু ও বাল্যবিবাহ। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ১৩৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গড়ে প্রতিমাসে ৫২টির বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় হওয়া মামলার মধ্যে গত ৫ বছরে মাত্র ১৬৪ মামলার রায় হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ঢাকায়, ১১৬ শিশু। ২০১৯ সালে শিশু হত্যা বেড়েছে ৭.১৮ শতাংশ। গড়ে প্রতিমাসে ৩৭ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুচ্ছ ঘটনা, পারিবারিক সহিংসতা, দাম্পত্য কলহ ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে শিশুর প্রাণ গেছে। গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে শিশু হত্যার ঘটনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৯ সালে ৪৪৮ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪১৮।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে। শুধু শিশু নয়, এর পাশাপাশি নারী ধর্ষণের সংখ্যাও কম নয়। সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আমাদের দেশে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রতিবাদ হয় কিন্তু প্রতিরোধের যথাযথ প্রয়োগ নেই। দেশের আনাচেকানাচে প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এগুলোর বেশিরভাগই আড়ালে থেকে যায়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় ধর্ষণের মামলা হলে আসামি জামিন পেয়ে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে হুমকিধামকি দেয় এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। সামাজিকভাবেও অনেকক্ষেত্রে পরিবারটিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে প্রত্যোকটি নাগরিকের সুবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা যখন দেশে মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তখন এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করার বিকল্প নেই। বিভিন্ন মহল থেকে আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করার দাবি জানানো হচ্ছে। আমরাও এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। রাষ্ট্রকে নারী-শিশুসহ অপামর মানুষের জন্য নিরাপদ করার জন্য কঠোর অবস্থানে যাওয়ার বিকল্প নেই।