বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নরীদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নেই একথা নতুন নয়। অনেকদিন থেকেই এ জায়গায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। নারী ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও তার লক্ষ্য পূরণে এখনও সিংহভাগই বাকি রয়েছে। এর সাথে একটি খারাপ খবর যুক্ত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর আইনি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দুই ধাপ অবনতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৭১তম, যা গতবছর ছিল ১৬৯তম। অর্থাৎ বাংলাদেশের পেছনে মাত্র উনিশটি দেশ রয়েছে। এবার বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৪৯ দশমিক ৪। বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নারীর চলাচলের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের স্কোর ১০০, কর্মক্ষেত্রে ৫০, কাজ করার জন্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫, ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ৭৫, সম্পত্তির অধিকারে ৪০, বিয়ে করা ৬০, সন্তান নেয়া ২০ এবং পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্কোর ২৫। মোট আটটি নির্দেশকের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রত্যেক দেশের স্কোর নির্ণয় করেছে। এতে শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোরিং দেওয়া হয়েছে। নির্দেশকগুলো হলো- নারীর চলাচলের স্বাধীনতা, চাকরি শুরু করা, কাজের প্রাপ্তি, বিয়ে হওয়া, বাচ্চা থাকা, ব্যবসা পরিচালনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পেনশন প্রাপ্তি। এসব নির্দেশকের ক্ষেত্রে একটি দেশের আইন নারীকে কতটুকু সুরক্ষা দেয়, তা বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত (১১৭তম), দেশটির স্কোর ৭৪ দশমিক ৪। এরপর মালদ্বীপের অবস্থান ১১৮ (স্কোর ৭৩.৮), নেপাল ১১৯ (স্কোর ৭৩.৮), ভুটান ১২৫ (স্কোর ৭১.৯), শ্রীলঙ্কা ১৩৭ (স্কোর ৬৮.১), পাকিস্তান ১৭২ (স্কোর ৪৯.৪) এবং আফগানিস্তান ১৮৩ (স্কোর ৩৮.১)। সর্বোচ্চ ১০০ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছে ৮টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই নিচে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপের চেয়ে অর্থনীতি কিংবা শিক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও নারীর আইনি সুরক্ষায় পিছিয়ে থাকা দুঃখজনক। যদিও চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১০০ স্কোর পেয়েছে কিন্তু বাকিগুলোর ক্ষেত্রে তা খুব কম। বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাইলে নারীদের পিছিয়ে রেখে তা কোনদিনই সম্ভব নয়। যেহেতু মোট জন্য সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী সেহেতু উন্নত দেশ গড়তে নারীদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি চাকরি শুরু করা, কাজের প্রাপ্তি, বিয়ে হওয়া, বাচ্চা থাকা, ব্যবসা পরিচালনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পেনশন প্রাপ্তি -এসবের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।