বকুলী বালার দেড় যুগ পর ঠাই হল নিজ বাড়িতে। সতের বছর পর মাকে খুজে পেয়ে আনন্দের বন্যা বইছে ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ ও প্রাণ কৃষ্ণের বাড়িতে। ঠাকুর কৃষ্ণ ও প্রাণ কৃষ্ণের মা বকুলী বালা তার বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নিখোজ হন। মা বকুলী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর অনেক খোজাখোজি করেও পাওয়া যায়নি। খুজে না পেয়ে স্বজনরা তাকে মৃত বলে ভেবেছিল।
গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নে মৃত মাখন চন্দ্র হাওলাদারের স্ত্রী মানষিক ভারসাম্যহীন বকুলী বালা(৭৯) ১৭ বছর আগে নিরুদ্দেশ হন। এসময় তার দুই ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ, প্রাণ কৃষ্ণ ও মেয়ে শেফালী ছিল। ছোট মেয়ে আলো রাণীর প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর ভারতে দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
ঠাকুর কৃষ্ণ জানান, মা হারিয়ে যাওয়ার পর দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে যুগ পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় স্বজনরা ভেবে নেয় তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাস্তার পাশে হোটেল থেকে খাওয়ার পানি নেওয়ার সময় নাতি রিপন দেখতে পায় ঠাকুমাকে (দাদি)। ঠিক চিনে না ওঠতে পারলেও মনের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে রিপনের। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেও নাম না বলে চলে যায় বকুলী বালা। রিপন ফোন দিয়ে তার বাবা ঠাকুর কৃষ্ণকে জানায় । ফোন পেয়ে ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ রোববার বিকেলে পটুয়াখালী শহরের তিতাস সিনেমা হল রোডের রাস্তার পাশে ঝুপরি ঘওে দেখতে পায় তার মা বকুলীকে। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজল বরণ দাসের সহায়তায় মাকে (বকুলী বালাকে) নিয়ে সোমবার বিকেলে গলাচিপার ডাকুয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসেন।
ঠাকুর কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলে রিপন কৃষ্ণের কাছে যহন মায়ের কথা শুনি, তহন সময় না করে পটুয়াখালী যাই। পটুয়াখালী যাওয়ার পর তিতাস সিনেমা হলের ধাওে একটা ঝুপড়ি ঘরে মা আমার ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে উঠিয়ে মায়ের কাছে আমি যহন জানতে চাইলাম-মা আমি তোমারে নিতে আইছি, আমার লগে যাইবা না? কথাগুলো শোনার পর মা আমার কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে-হ যামু। এই কথা বলেই মা আমারে কোলে টেনে নেয়।’ ঠাকুর কৃষ্ণ আরো বলেন, ‘১৮বছর আগে আমার ছোট বোন আলো রাণীর বিয়ে হয়। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে ওই বোনকে আমরা ভারত পাঠালে সেখানে আমার বোন আলো নিখোঁজ হন। এ ঘটনার পর থেকে আমার মা বকুলী বালা মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। একদিন বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে সেই যে নিরুদ্দেশ হন। বহু দিন পর আজ খুঁজে পেলাম মাকে।’
এ ঘটনা সম্পর্কে তালবাড়িয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শ্যামল চন্দ্র শীল বলেন, ঠাকুর কৃষ্ণের মা বকুলী বালা ১৭/১৮ বছর আগে ছোট মেয়ে আলো রাণী নিঁেখাজের পর থেকে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তিনিও দেড় যুগ ধরে নিরুদ্দেশ ছিলেন। বকুলীর আত্মীয়-স্বজন এবং বকুলীকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে।’
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আখতার মোর্শেদ বলেন, ‘বকুলী বালা ফিরে আসার খবর পেয়ে আমি তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছি। তিনি এখন সুস্থ আছেন।