আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দিন বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার দিন। তার জন্য এ দেশের মানুষকে দীর্ঘ নয় মাস পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে পিলখানা, ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের বাসস্থানে হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ¦ালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বস্তি, টার্মিনালসহ জনবহুল এলাকায় ঝাঁঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। তাদের এই ভয়াবহ তা-ব চলে সারারাত। এই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পূর্বক্ষণে, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মূলত ২৬ মার্চ প্রত্যুষেই শুরু হয় বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধ। বলা চলে নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তথা চূড়ান্ত লড়াই এ দিনই শুরু হয়। সেই থেকে হানাদারদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে একের পর এক সর্বাত্মক প্রতিরোধ। এক কোটি মানুষ প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেয় শরণার্থী হিসেবে। গঠিত হয় বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী সরকার। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছি একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার জন্য এমন আত্মত্যাগ খুব কম জাতি করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সেদিন সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়।
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস স্বীকৃতি আদায়ের। তারপরও স্বাধীনতার পূর্ণতা পেতে আরও কিছু কাজ বাকি। এজন্য লড়াই এখনও শেষ হয়নি। দেশকে পুরোপুরি স্বনির্ভর, উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং সর্বোপরি স্বাধীনতার সুফল ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে বড় অর্জনগুলোর কথা না বললেই নয়। দেশে বর্তমানে যে অর্জনগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বপ্নের পদ্মা সেতু, যেটি নিজস্ব অর্থে চীনের সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে। এর বাইরেও রাশিয়া ও ভারতের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প। দেশ এখন বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্রমবর্ধমান জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম, মংলার পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ এগিয়ে চলেছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে দেশ। গার্মেন্টস রফতানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। রফতানি আয়ও ক্রমবর্ধমান। বেড়েছে প্রবাসী আয়। রাজধানীতে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। এসবই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল বলতে হবে।
এবারও নানা আনুষ্ঠানিকতায়, নানা আয়োজনে এই মহান দিবসটি পালন করার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে তেমন কিছুই হচ্ছে না। আমরা এই মহান দিনটিতে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহকর্মী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সকল নেতাকে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনদের। যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেসব প্রেরণাকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করার ও তা সমুন্নত রাখার যুদ্ধ আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে।