আবেগের চেয়ে জীবন বড়,” -এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পুলিশ নেত্রকোণার বারহাট্টায় পীরের জানাজায় লাখো মানুষের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। চিশতিয়া তরিকার প্রখ্যাত পীর শাহে আলম নূরুজ্জামান চিশতী (৮২) গত বৃহস্পতিবার রাত গভীর রাতে মৃত্যূবরন করেন (ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পীরের বাড়ি উপজেলার হুজরাবাড়ি গ্রামে। তার মৃত্যূর সংবাদে শুক্রবার এখানে লাখো মানুষের সমাগম ও বর্তমান করোনা-মোকাবেলায় স্বাস্থ্য-বিধি (সামাজিক দূরত্ব-ব্যবস্থাপনা) ভেঙ্গে সাম্প্রতিক ব্রাক্ষণবাড়িয়া-পরিস্থিতি সৃষ্ঠির তীব্র আশঙ্কা দেখা দেয়। বিপর্যয় এড়াতে তড়িৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেলা পুলিশ।
স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পীর ছাড়াও নূরুজ্জামান চিশতী একজন মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে বারহাট্টার পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশায় রয়েছে তার হাজার হাজার ভক্ত-মুরিদান। মৃত্যু সংবাদ রাতেই চতূর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারদিন এলাকাবাসী ছাড়াও দূর-দূরান্তের লাখো মানুষ হুজরাবাড়িতে পীরের নামাজে জানাজায় শরিক হতে আসছে- গোয়েন্দাসূত্রে এই খবর পায় পুলিশ। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষযটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ নড়েচড়ে বসে। পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সির পরিকল্পনা ও উপস্থিত নিদের্শে নেত্রকোণা জেলা সদরের ৭টি চেকপোস্ট অধিকতর সতর্ক করা হয়। পীরের বাড়িতে আসার সকল ফিডার রোডেও চেকপোস্ট বসানোসহ বিভিন্ন রাস্তায় ২৬টি টহল পার্টি মোতায়েন করা হয়। পুলিশের অনুরোধ এবং বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাইনুল হক কাসেম, নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাহ মোঃ আবদুল কাদেরসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ফলে একটি নিশ্চিত সামাজিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়।
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে হুজরাবাড়ির পীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান চিশতীর নামাজে জানাজা ও দাফন কার্য সম্পন্ন হয়েছে। এতদোপলক্ষে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সির সরাসরি তত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস. এম. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বারহাট্টা সার্কেল) মোঃ সাইদুর রহমানসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যগণ নিয়োজিত ছিলেন।