করোনায় আক্রান্ত সাড়া বিশ্ব। এ ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের কোন পথই যেন খোলা নেই। অদৃশ্য এ শক্তির নিকট সাড়া পৃথিবী এক অসহায়ত্বের বৃত্তে আবদ্ধ। অনেক গবেষণাতেও এর প্রতিশেধোকের বিষয়ে সাফল্যে যেতে পারেনি বিশে^র উন্নত দেশ গুলো। এই যখন অবস্থা, তখন নিজেদের আলাদা রাখা কিংবা গৃহে অবস্থানই এ ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র পথ এই মুহুর্তে মনে করছেন চিকিৎসা বিশ্লেষকরা। এটাই যে একটি কার্যকর পথ, তা দেখিয়েও দিয়েছে বিশে^র কয়েকটি দেশ। তাদের মধ্যে ভিয়েতনামের মত একটি স্বল্পোন্নত দেশ অধিক সচেতনতা অবলম্বন করে এ ভাইরাস থেকে নিজেদেরকে অনেকটাই রক্ষা করেছেন। তাদের এই সাফল্য প্রশংসনীয়। আমাদের মত দেশেও এটি সম্ভব ছিলো, আগে থেকে নিজেদের সচেতন করতে পারলে। যা হোক নানা কারনেই তা সম্ভব হয়েও ওঠেনি। অন্যান্য দেশের ন্যায় চলাচল বন্ধে আমাদের দেশেও প্রথমে স্বল্প পরিসরে লকডাউন করা হয়। পরে ক্রমান্নয়ে প্রায় পুরো দেশই এ লকডাউনের আওতায় চলে আসে। কিন্তু লকডাউনের প্রথমে সারা থাকলেও পরে আস্তে আস্তে মানুষ আর সেদিকে নজর দিচ্ছেনা। আমাদের দেশের শিক্ষার হার কম থাকায় অধিকাংশ জনসাধারণ সচেতনতার দিকে খুব একটা নজর নেই। এর সাথে অবশ্য আরও একটা জরুরী বিষয় জরিত। তা হলো খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেশি। যারা একদিনের জন্যও বাড়িতে বসে থাকলে জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষগুলোর বেকায়দা সব চেয়ে বেশি। তারা ঘর থেকে না বের হলে সংসারের চাকা ঘোরে না। যে কারনে করোনাকালে দির্ঘদিন তাদের ঘরে আটকে রাখাও সম্ভব হচ্ছেনা। জীবন জীবিকা থমকে যাওয়া এসব জনগোষ্ঠির কথা বিবেচনা করে সরকারী ভাবে নানা পদক্ষেপই গ্রহন করা হয়েছে। তার মধ্যে সম্প্রতিকালে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া একটি অন্যতম। আসলে যে স্বার্থ বিবেচনায় গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হলো, তা কি সফল হবে। আর যেসব নিয়ম মেনে কিংবা পরিবেশ সৃষ্টি করে এসব কারখানায় কাজ করার কথা, তা কি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে? নাকি অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠির সর্বনাশ নেমে আসবে? ঘুরে ফিরে এমন প্রশ্নই বার বার সামনে আসছে। এসবের মধ্যেই আবার সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে ঘোষনা এসেছে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত শপিং মল ও দোকানপাট খোলা রাখার। এতে ব্যবসা বাণিজে¦্য দির্ঘ ধকল কাটাতে হয় তো বা কিছুটা গতি আসতে পারে। কিন্তু ঈদের কেনাকাটায় এদেশের মানুষের অতীত ইতিহাস সবারই জানা রয়েছে। কেনাকাটায় কিভাবে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা সবাই অবগত। করোনা নিয়ে ভাবেন, এমন দেশি বিদেশি সকল বিশ্লেষকরাই চলতি মে মাসকে অধিক বিপদাপন্ন সময় হিসেবে চিহিৃত করেছেন। এ মাসটাই সবচেয়ে বেশি সচেতনতা অবলম্বনের কথা বলে আসছেন তারা। তার কারন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মুখ সময় এটা। এমন বিপদ সময়ে আসলে ঈদের কেনাকাটায় যখন মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, তখন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টা লাফিয়ে বাড়বে কিনা? ভেবে দেখছেন কি একবার। জীবনে তো অনেক ঈদ উৎসবই ঘটা করে পালন করেছি আমরা। এবার এমন মহামারি ও দির্ঘ বিপদের সময় একটাবার কেনাকাটা না হয় না ই করলাম। মনকে কি বুঝ দেওয়া যেত না। একবার না হয় এসব চিন্তা বাদ দিতাম। একটাবার শপিং না করলেই কি নয়?
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী