বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদস্যদের সহযোগিতায় করোনায় সৃষ্ট সকল সমস্যা দূর করে দেশের বৃহৎ টমেটোর পাইকারী বাজারে ১০০টাকা দরের প্রতি মন টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫০টাকা। এতে কৃষক, ব্যসায়ীসহ সবাই লাভবান।
দিনাজপুরে টমেটোর বাম্পার ফলন। কিন্তু লাভজনক ফসল হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে প্রথমদিকে টমেটো বিক্রি করে দাম না পেয়ে হতাশ ও লোকসানে পড়েন টমেটো চাষিরা। লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকট ও বাইরের ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন কৃষকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অথচ প্রতি মৌসুমে দিনাজপুরে কয়েক কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের, খোলাহাটি ৪ ফোর্স, স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী, বাজার কমিটি ও কৃষকের সাথে কথা বলে সকল সমস্যা দূর করে কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, মুখে মাস্ক ব্যবহার করে দেশের এই বৃহৎ টমেটোর বাজার আবার ঘুরে দাড়ায়। মঙ্গলবারও৩৫ ট্রাক টমেটো অন্য জেলায় যায়। এখন এই টমেটো বাজারে প্রতি মন ১০০ টাকার স্থলে বর্তমানে ৯৫০টাকায় দাড়িয়েছে। এতে কৃষক,ব্যসায়ীসহ সবাই লাভবান। এতে খুশি এই বাজারের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করা কয়েক হাজার শ্রমিক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের, খোলাহাটি ৪ ফোর্স’র মেজর মোঃ সারোয়ার তুষার জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্টের ভিত্তিতে জানতে পারি টমেটো বিক্রি করে কৃষক লোকসানে। তখন এই টমেটোর বাজারে আসি এবং ব্যবসায়ীসহ প্রান্তিক কৃষকের সাথে কথা বলি। করোনা আতঙ্কে এখানে র পাইকারী ব্যবসায়ী খুব কম আসায় বিক্রি কম। এতে লোকসানে পড়েন কৃষক। তখন আমরা বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যেসব পাইকারী ব্যবসায়ী করোনার আতঙ্কে আসতে পারেননি, তাদের আনার ব্যবস্থা করি। এরইমধ্যে ৩২জন ব্যবসায়ীকে পঞ্চগড় জেলাতেও পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এ বাজারের প্রথম দিকে উৎপাদন বেশী কিন্তু ব্যবসায়ী ছিলনা। এতে টমেটো কোথাও যাচ্ছিল না। পরিবহন ব্যবস্থাও সমস্যা ছিল। তখন এসব সমস্যা নিয়ে সবার সাথে সমন্বয় করে কাজ শুরু করি। এখন সেই টমেটো ৯৫০ টাকা মন দরে বিক্রি করতে পারছে। ঈদের আগে এবং পরে আরও পাইকারী ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েও কাজ করছি।
শেখপুরা ইউপির চেয়ারম্যান ও ইজারাদার মমিনুল ইসলাম জানান, এটি বাংলাদেশের বৃহৎ টমেটোর বাজার। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই টমেটো যায়। করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসাীরা আসতে না পারায় স্থানীয় কৃষকরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন। এখানে ১০০-১৫০ টাকা মন দরে টমেটো বিক্রি হয়। যখন সেনাবাহিনী এই বাজারে এলেন এবং দেখলেন কেনাবেচা কম। তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে বললাম করোনার জন্য কোন ব্যাপারী আসতে চাই না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফার মধ্যে কাঁচা বাজার চলবে। সেই আলোকে সেনাবাহিনীর সাথে কথা বললাম এবং এরপর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারী আসতে শুরু করায় নতুন আঙিকে কেনাকাটা শুরু হলো। এরপর থেকে টমেটোর দাম বেড়ে বর্তমানে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০টাকা। এখন স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী-পাইকাররা সবাই লাভবান। এটা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার পাইকারী ব্যবসায়ী শফিউদ্দিন জানায়, আমনা যখন এই বাজারে প্রথম আসি তখন ভয়ে বাজারে এসে টমেটো কিনতে পারি নাই। এরপর সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে আমার মোবাইলে ফোন দেন জিঙ্গেস করেন, টমেটোর এত দাম কম কেন? এর উত্তরে বললাম, আমরা সময়মত গাড়ী পায় না, দোকানপাটও নেই। তখন তারা বললেন, আপনারা আসেন সমস্যা হলে আমরা আছি। আপনারা টমোটা কিনেন। কেনাকাটার পর এখন কৃষকরা লাভবান, আমরাও লাভবান। এখন কৃষক প্রতি মন টমেটো ৯০০-১০০০টাকায়ন বিক্রি করতে পারছেন।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরে জেলার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক টমেটোর চাষ হয়। প্রতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলা থেকে কয়েক কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এসব টমেটো যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
এবার জেলায় সাড়ে ১১শ’হেক্টর জমিতে টমেটোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টন।