প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শতভাগ সফল করার জন্য বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনা’ মোকাবেলার সম্মুখ সমরের এক যোদ্ধা হিসেবে অবুঝ দুটি শিশু সন্তানকে মায়ের স্নেহ, মায়া-মমতা থেকে দূরে রেখে সূচনা লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে মাঠে লড়াই করে আসছেন বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান।
তিনি ভিন্নরকম কৌশল অবলম্বন করে সরকারি নির্দেশনা সফল বাস্তবায়ন ও মানুষকে সেবা দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তার (ইসরাত জাহান) মানবিক কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে গোটা বরিশালজুড়ে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
সূত্রমতে, করোনার প্রদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিনোদন দিয়ে ঘরে রাখতে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা ও লকডাউনের ফলে কর্মহীন মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রানান্তর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন চৌকস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান।
জানা গেছে, ইসরাত জাহান ২৯তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীতে সহকারী কমিশনার পদে প্রথম যোগদান করেন। পরবর্তীতে পটুয়াখালীর কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। কাউখালী থেকে গত বছরের ৬ আগস্ট তিনি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। গৌরনদীতে যোগদানের পর থেকেই তার মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে অল্পদিনেই তিনি জনসাধারন ও রাজনৈতিক মহল থেকে সর্বস্তরে চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে আস্থা অর্জন করেছেন।
স্থানীয় জনসাধারণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও কর্মহীন মানুষের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর দলে দলে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গৌরনদীর উপজেলায় প্রায় আটশ’ প্রবাসী আসেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান তার কোলের কোমলমতি দেড় বছরের শিশু তাসফিন ইবনে ও ছয় বছরের কন্যা রুবামা বিনতে হানিফকে বাসায় রেখে প্রশাসনের যৌথ একটি টিম নিয়ে দিন-রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেন। এ ব্যাপারে (কোয়ারেন্টিন) গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচারপত্র বিলি ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনা চালান।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করেছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান নিজে উপস্থিত থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অর্ধশত ব্যবসায়ীকে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করে বাজার স্থিতিশীল রাখেন।
উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মায়ের মমতা ও ভালবাসা দিয়ে সচেতন করে সাধারণ মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মানতে রাজি করিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি পরিবার ভিত্তিত কমিউনিটিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে উৎসাহ দিতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিনোদন সামগ্রী হিসেবে লুডু, দাবা বিতরণ করেছে। নারী কর্মীদের দিয়ে মাস্ক তৈরী করে হতদরিদ্র মানুষকে দুই হাজার মাস্ক ও স্যানিটাইজার প্রদান করেছে।
সৈকত গুহ পিকলু আরও বলেন, লকডাউন শুরু হলে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসা চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র নিদের্শে এবং জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের পরামর্শে নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দিন-রাত কয়েক হাজার কর্মহীন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিজ হাতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকারের একজন সামান্য কর্মচারী হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও জেলা প্রশাসকের পরামর্শ শতভাগ সফল করার জন্য দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তবে এসব কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুকরন করে আমাকে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। সবক্ষেত্রে শাসন নয়; প্রধানমন্ত্রীর মতো ভালবাসা ও মমতা দিয়ে আমাকে কাজগুলো করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে করোনা যুদ্ধে আগামী কঠিন দিনগুলো মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য আমি গৌরনদীর সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চাই।