এমনিতেই করোনার ছোবলে বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট চলছে। তাওআবার যৎ সামান্য মিলেও তার জন্য গুণতে হচ্ছে অধিক পারিশ্রমিক। এরপরও কৃষক অতিকষ্টে কিছু ধান কাটতে পারলেও বেশির ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেনি উপজেলার কৃষকরা। তৈরি হয়েছে নতুন করে সংকট। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চালান সুপার সাইক্লোন আম্ফান ফলে জয়পুরহাটের কালাইয়ে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারী বাতাসে পাকা ও কাঁচা ধানের গাছগুলো ক্ষেতে হেলে পড়ে মাটির সঙ্গে লেগে পানির নিচে ডুবে আছে। ডুবে যাওয়া ধানগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা মাঠে নেমে তাদের ধানের চারাগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কৃষকদের স্বপ্নের পাকা ও কাঁচা ধান ক্ষেতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে। এতে করে উপজেলার হাজার হাজার কৃষকেরা বর্তমান দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তবে ধানের তেমন ক্ষতি হবেনা। আর কৃসকদের চিন্তার কোন কারণ নেই। আবহাওয়া ভালো হলেই জমি থেকে পানি নেমে যাবে। তখন ওই জমির ধানগুলো আগের মতোই ভালো হবে এমটি জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
উপজেলার মাত্রাই গ্রামের রঞ্জু তালুকদার জানান, এবার তিনি ১৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। উপজেলা কৃষি অফিস পরামর্শে ধানের গাছগুলোও দেখার মতো হয়েছিল। ধানগাছে যে শিষ এসেছিল তাতে ফলনও খুব ভালো হবে এটা আশা করেছিলেন তিনি। তার ধানও কাঁটার উপযোগী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সাইক্লোন আম্ফান কারণে টানা বৃষ্টি ও বাতাসে তাঁর সব ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে করে কিছু ধান মাটিতে পড়ে থেকে নষ্ট হবে এবং কিছু ধান কাঁটার সময় ঝরে পড়বে। এর ফলে তার ফলন অনেক কমে যাবে।
একই উপজেলার দেওগ্রামের অবু হোসেন জানান, ৬বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে তার ১লাখ থেকে ১লাখ ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। মাঠে এবার যে ধান হয়েছিল তাতে বিঘাপ্রতি ২২ থেকে ২৪ মণ ধান হবে। হিসাব অনুযায়ী কৃষক এই ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলবেন। সেখানে ধানগাছ মাটিতে হেলে পড়ায় তাঁর অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে তাঁর উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার সুড়াইল গ্রামের বর্গাচাষী যোবাইল ইসলাম জানান, ধান চাষ করেই সংসার চলে তার। আর এই ধান নিয়ে ছিলো তার অনেক “স্বপ্ন’। সাইক্লোন আম্ফান কারণে তার ৮ বিঘা জমির প্রায় ধান ক্ষেতে পড়ে গেছে। জমির ধানগাছ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকেরা কাটা ও মাড়াই করতে চাচ্ছেন না। অধিক টাকা দাবি করছেন তাঁরা। একদিকে অধিক টাকার বিনিময়ে কৃষিশ্রমিক নিয়োগ আর অপর দিকে ধান নষ্ট হওয়ায় এবার বোরো-ধান চাষে তাঁর লোকসান হবে।
কালাই উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আসাদুজ্জামান বলেন, কালাই উপজেলায় এবার চলতি বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো-ধান চাষাবাদ হয়েছে। এবার ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। ইতোমধ্য কৃষকেরা প্রায় ৮শহেক্টর জমির ধান কর্তন করেছেন। কিন্তুগত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সুপার সাইক্লোন আম্ফান কারণে কিছু কিছু স্থানে প্রায় ১হাজার ৩শ হেক্টর জমির পাকা ও কাঁচা ধানের গাছগুলো হেলে পড়েছে। তবে ধানের তেমন ক্ষতি হবেনা। আর কৃসকদের চিন্তার কোন কারণ নেই। আবহাওয়া ভালো হলেই জমি থেকে পানি নেমে যাবে। তখন ওই জমির ধানগুলো আগের মতোই ভালো হবে। তাছাড়া উপজেলার সকল কৃষদের সু-পরামর্শসহ সব ধরণের সহযোগীতা করে আসছি। তাই আশা করছি এবারেও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।