কোনো কথা বলার আগে তার কী অর্থ দাঁড়াতে পারে, তা মাথায় রাখা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। লাদাখে ভারত-চীন সমস্যা নিয়ে মুখ খুলে নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে এ কথা বললেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। চীন যাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেই হাতিয়ার করতে না-পারে, সে কথা মনে রাখতে হবে বলে জানান তিনি। লাদাখ সীমান্তে সেনাবাহিনীর যে সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন মনমোহন সিং। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে বলব কর্নেল সন্তোশ বাবু ও যে সেনারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা করুন এবং আমাদের ভূখ-কে রক্ষার চেষ্টা করুন। এটা করা না-হলে মানুষের বিশ্বাসের প্রতি ঐতিহাসিক প্রতারণা করা হয়ে যাবে।’ দেশ বর্তমানে একটা ঐতিহাসিক টানাপোড়েনের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে জানিয়ে মনমোহন বলেন, ‘যাঁরা আমাদের নেতৃত্ব দেন তাদের কাঁধেই যাবতীয় দায়িত্ব থাকে। আর আমাদের গণতন্ত্রে সেই দায়িত্ব থাকে প্রধানমন্ত্রীর উপর। প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই সবসময় এটা মনে রাখা উচিত যে, দেশের সুরক্ষা নিয়ে তার কোনো শব্দপ্রয়োগ ও বিবৃতি দেশের কৌশলগত ও ভূখ-ের স্বার্থের সাথে জড়িয়ে রয়েছে।’ তার কথায়, ‘চীন বেআইনিভাবে গলওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং সো লেকের মতো ভারতীয় ভূখ-ের অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত বারবার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যেন ওরা প্রতিশোধ নিতে ব্যবহার করতে না-পারে নিশ্চিত করতে হবে।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে অবশ্যই দেশ হিসেবে একজোট ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এ দিকে, ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টায় সোমবার ফের বৈঠকে বসতে চলেছে ভারত ও চীন। এ দিন দু দেশের শীর্ষ সেনা কর্তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ব লাদাখের চুশুলের চীনা ভূখ- মলডোয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্তরের বৈঠক হবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই বৈঠকের কথা জানানো হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘গলওয়ান-সহ সব বিষয় নিয়েই ওই বৈঠকে আলোচনা হবে।’ এর আগে, গত ৬ জুন সেনাবাহিনার এই স্তরের বৈঠক হয়েছিল। সপ্তাহখানেকের উত্তেজনার পর সেই বৈঠকেই ডি-এসক্যালেশন অর্থাৎ বাহিনী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে ঐক্যমত্যে পৌঁছয় দু দেশ। তবে আলোচনার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গলওয়ানে বিশেষ অভিযানের জন্য পুরোপুরি তৈরি ভারতীয় সেনা। রোববার রাত পর্যন্ত সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব লাদাখে ভারতের প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় সমরসজ্জা এবং নয়াদিল্লির তৎপরতা গলওয়ানে বিশেষ অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ।