পর্দায় ভিলেন হিসেবেই বেশি দেখা যায় তাকে। সম্প্রতি লকডাউনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুম্বাইয়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার কারণে রীতিমতো হিরো তিনি। বলছি, অভিনেতা সোনু সুদের কথা। রুপালি জগতে সোনু সুদের পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। পাঞ্জাবের মোগা শহরে জন্ম। নাগপুরের যশবন্তরাও চহ্বন কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিনেতা হওয়ার নেশায় সব ছেড়ে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান। প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আসে দক্ষিণী সিনেমায়। এরপর অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে। ১৯৯৯ সালে তামিল ভাষার ‘কালাজাগার’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন সোনু সুদ। তার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘শহিদণ্ডই-আজম’। ২০০২ সালে মুক্তি পায় এটি। এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এক সাক্ষাৎকারে সোনু সুদ বলেন, ‘আমার মা অধ্যাপক। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারও হয়েছিলাম। কিন্তু একদিন তাকে বললাম, আমি অভিনেতা হতে চাই। আমাকে ১-২ বছর সময় দিন। যদি আমি কিছু করতে পারি, তাহলে ঠিক আছে। না হলে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেব।’ সোনু সুদের বাবা কাপড়ের ব্যবসায়ী। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন অভিনয়ে প্রতিষ্ঠা না পেলে ফিরে এসে বাবার ব্যবসা সামলাবেন। এর পরের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে সোনু বলেন, ‘মুম্বাই এসে স্ট্রাগল শুরু করি। আমি অফিসে অফিসে ঘুরতে লাগলাম। অন্যান্যের মতো আমার ছবি দেখাতাম। অনেকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। অনেকে আমার সঙ্গে দেখাও করতে চাইত না। এর মধ্যে মুম্বাইয়ের রাস্তাঘাট চিনতেই দেড় বছর পার হয়ে গেলো।’ প্রথম সিনেমার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তামিল সিনেমার একজন কো-অর্ডিনেটর আমার ছবি দেখে পছন্দ করেন এবং আমাকে ডেকে পাঠান। এরপর চেন্নাইয়ের ট্রেনে উঠে পড়ি এবং আমার প্রথম সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই। এভাবেই শুরু হয়। তামিল, তেলেগু ও কন্নড় ভাষার সিনেমায় অভিনয় করতে করতে হিন্দি সিনেমার নির্মাতাদের চোখে পড়ে যাই।’ সোনু সুদ দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করতে চাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ইন্ডাস্ট্রিতেই তার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছিল। নিজের এই পথচলা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমার অন্য উপায় ছিলো না। আমি কাউকে চিনতাম না। মনে আছে, প্রযোজক আমাকে ডাকলে বিজয় বাহিনী স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। তিনি টি-শার্ট পরা ছবিতে আমাকে দেখেছিলেন। ফলে আমার শারীরিক গড়ন তার পছন্দ হয়। তিনি আমাকে শার্ট খুলে শরীর দেখাতে বললেন। আমার মনে হয় মানুষের দোয়া আমার সঙ্গে রয়েছে। কারণ যখন শহরে ছেড়ে এসেছিলাম আমি মুম্বাই কতদূর জানতাম না। এখন আমি জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে অভিনয় করি। মনে হয় অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সাহায্য করেছেন এবং আশা করছি ভবিষ্যতেও করবেন।’ সোনু সুদ মনে করেন, তার এই সাফল্যের পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তার মা। তিনি বলেন, ‘মা বেঁচে নেই। আমি তাকে কলেজে পৌঁছে দিতাম, আবার বাসায় নিয়ে আসতাম। আমিও ওই কলেজে পড়েছি। তিনি আমারও শিক্ষক। মা বলতেন, কঠোর পরিশ্রম করো- স্বপ্নপূরণ হবেই। তিনি চিঠি লিখে অনুপ্রেরণা জোগাতেন। যখন হতাশ হয়ে পড়তাম মা’র সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতাম। মা হেসে বলতেন, একদিন এই চিঠিগুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে, ফোন কলে কোনো স্মৃতি থাকবে না। ১৯৯২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাকে লেখা চিঠিগুলো এখনো পড়ি। আমার ধারণা, আজ আমার এই অবস্থান তিনি আগে থেকেই কল্পনা করতে পেরেছিলেন।’