বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচ দফা নির্দেশাবলী সম্পর্কে ময়মনসিংহ রেঞ্জের আওতাধীন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণপুর্বক উদ্দীপনামূলক, মাদক, দুর্নীতি, মানবিক ও বিট পুলিশিং এর এক বিশেষ কল্যাণ সভা সোমবার (২৯ জুন) শেরপুর জেলার পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেড এ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ বিপিএম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি ড. মোঃ আক্কাছ উদ্দিন ভূঁঞা ও কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ।
সভায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল) আমিনুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল, ঝিনাইগাতী থানার ওসি আবু বকর ছিদ্দিক, শ্রীবরদী থানার ওসি রুহুল আমীন তালুকদার ও নকলা থানার ওসি আলমগীর হোসেন শাহ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ বিপিএম তার বক্তব্যে চলমান কোভিড- ১৯ সংকটময় মুহূর্তে শেরপুর জেলা পুলিশের মানবিক কার্যক্রমের ভুয়সী প্রশংসা করে জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসের সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশের মৌলিক দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রম সর্বমহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে এবং পুলিশের ভাবমূর্তিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, পুলিশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষে বাংলাদেশ পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে তৈরি হতে হবে।
ডিআইজি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রথমে পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। এ বিষয়ে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইজিপির জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, পুলিশ সদস্যরা কোন ভাবেই কোন ধরনের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদক বর্তমান যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমাদের যুব সমাজকে এই মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমানে যুব সমাজকে সুশিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মাদক নির্মূলে তিনি সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। মাদক নিমূলের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মাদকের সাথে পুলিশের কোন সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তিনি এক মাসের মধ্যে যার যার থানা এলাকা মাদকমুক্ত করার আল্টিমেটাম প্রদান করেন।
তাছাড়া, পুলিশকে জনসাধারনের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে বলেছেন। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে এ দেশের জনসাধারনকে সেবা দিতে হবে। এ বিষয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশনা উল্লেখ করে বলেন, মানুষকে কোন রকম নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। মানুষকে নির্মোহভাবে ভালবাসতে হবে। সকল অবস্থায় মানুষের পাশে থেকে মানুষকে সেবা দিতে হবে। এমনকি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথেও বিধিবহির্ভূত আচরণ করা যাবে না। পুলিশকে পেশাদারিত্বের সাথে অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ করতে হবে। পুলিশী সেবা জনগনের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন।
“মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার” এ শে¬াগানকে সামনে রেখে ইন্সপেক্টর জেনারেল বলেন বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশী সেবাকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষে প্রতিটি ইউনিয়নকে একটি বিটের আওতায় এনে আইন-শৃংখলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রন করাসহ মানুষের পাশে থেকে সেবা প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করে আরো বলেন, পুলিশের দ্রুত উপস্থিতি পারে মানুষের জান-মাল রক্ষা করতে। তদুপরি চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সদস্যদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া প্রত্যেক সদস্যের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখতে সকল ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ বিপিএম পুলিশ সদস্যদের মাঝে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন।