ঈদকে ঘিরে যখন সারাদেশে ব্যতিক্রমধর্মী গরুর পশরা নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া খবরের যোগান দিচ্ছে। আগ্রহিদের জোগাচ্ছে আলোচনার খোড়াক। সেখানে পিছিয়ে থাকবে কেন কুড়িগ্রাম জেলা। এবার উত্তরের এই সীমান্ত ঘেঁষা বানভাসী জেলার একটি গ্রামে অস্ট্রেলিয়ান শংকর জাতের একটি ষাড় এলাকার মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে তোলার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। জেলায় এতবড় গরু কেউ কোনদিন প্রতিপালন করেছে কিনা তাই নিয়ে চলছে হিসেব নিকেশ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগ্রহি মানুষ ও ক্রেতারা ষাড়টি দেখতে ভীর জমাচ্ছে বাড়িটিতে। মালিক দাম হাঁকিয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। নাম রেখেছে ‘বাংলার রাজা’। ষাড়টি বাংলার রাজা কিনা তা জানা না গেলেও সেটি যে কুড়িগ্রাম জেলার রাজা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাদা-কালোর উপরে শারীরিক রঙের ষাড়টি যখন হেঁটে চলে তখন বিশাল দেহে ঢেউ খেলে যায়। শিশুরা ভয়ে কাছ ঘেঁষতে চায় না। ঘরের বাইরে আনলে অপরিচিত পরিবেশে প্রথমে হিংস্রভাবে ফোঁস ফোঁস করে নি:শ্বাস ছোঁড়ে। চোখ পাকিয়ে শিং দিয়ে মাটি খুড়ে শান্ত হয়। খাবারের সময়েও রয়েছে তার রাজকীয় ভাব। এমন স্বভাবের কারণে তার নাম রাখা হয়েছে ‘বাংলার রাজা’।
ষাড়টির মালিক কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম মানিককাজীর বাসিন্দা উমর আলীর ছোট ছেলে জয়নাল আবেদীন। প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে ষাড়টি লালন পালন করছে সে। বেশ কয়েক বছর আগে দুধের যোগান দিতে একটি গাভী কেনেন। সেই গাভীর পেটে বাংলার রাজা’র জন্ম। নিতান্ত শখের বসে ষাড়টি লালন পালন করা শুরু কেরন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান শংকর জাতের ষাড়টি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এখন তার ওজন প্রায় ২৪ থেকে ২৫ মন। দৈত্যাকার ষাড়টির দৈর্ঘ্য ১২ ফিট। উচ্চতা ৬ ফিট। অর্থনৈতিক কারণে পরিবারের সদস্য হিসেবে বেড়ে ওঠা বাংলার রাজাকে এবার বিক্রি করতে চাচ্ছেন তিনি। দাম হাঁকিয়েছেন ১৫ লক্ষ টাকা।
জয়নাল আবেদীন জানান, সম্পূর্ন দেশী খাবার দিয়ে ষাড়টি লালন পালন করেছেন তিনি। কখনো মোটাতাজাকরণ ওষুধ কিংবা রাসায়নিক কোন খাবার দেননি। শুধুমাত্র কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাইয়েছেন। ষাড়টিকে দৈনিক খাবার হিসেবে ধানের গুড়ো, গমের ভুষি, খড় আর ঘাস খাইয়েছেন। ঘাসের যোগান দিতে এক বিঘা জমিতে উন্নতজাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে বাংলার রাজা’র জন্য দৈনিক ৪ থেকে ৫শ’ টাকার খাবার যোগান দিতে হয়।
প্রতিবেশী সোহরাব, আজাহার আলী ও আজম মিয়া জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আমাদের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে লোকজন আসতে পারে না। জয়নাল আবেদীন অনেক অর্থ ব্যয় আর কষ্ট করে ষাড়টি বড় করেছে। করোনা আর বন্যার কারণে এতদূরে কোন ক্রেতা আসতে পারছে না। ফলে ষাড়টি বিক্রি করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সবাই আশাবাদী ন্যায্য মূল্যে ষাড়টি বিক্রি করতে পারবেন জয়নাল আবেদীন।
বাংলার ষাড় নিয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) ডাঃ কে,এম ইফতেখারুল ইসলাম জানান, জয়নাল আবেদীন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ষাঁড়টিকে প্রতিপালন করছেন। আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর এবং পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি ন্যায্য মূল্যে তিনি গরুটি বিক্রি করতে পারবেন।