জয়পুরহাটের কালাইয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল উপরে ভেসাল (বেগ) ও কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে অবাধে মাছ শিকার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন খালে শতাধীক স্থানে ভেসাল(বেগ) জাল ও প্রতিটি খালের আশপাশে অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে প্রকাশ্যে মাছ শিকার করছেন তারা। সাধারণত এই ধরনের জালে দেশীয় প্রজাতীর মাছ শিকার হয়ে থাকে। সরকার এক দিকে বিশাল আয়োজনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করছেন আর অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালের উপরে ভেসাল (বেগ) ও কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার করে অবাধে মাছ শিকার করছেন। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে ঐসব খালের পানির স্রােত ও পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্থসহ খালের আশে-পাশে কৃষিজমি জলাবদ্ধতা হয়ে থাকছে এবং ডিমওয়ালা ও ছোট পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রানী অকালে মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
শুক্রবার সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, এমন কোন খাল নেই, যে খালে ভেসাল জাল নেই এবং এমন কোন খাল নেই তার আশপাশে কারেন্ট জালের ব্যবহার নেই। বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে গ্রাামের খাল-পুকুর ও নিচু এলাকা ধীরে ধীরে পানিতে ভরে উঠার সাথে সাথেই ভেসাল(বেগ) ও কারেন্ট জালের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। কেউ মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে আবার কেউ শখের বসে মাছ শিকার করে থাকেন। এই উপজেলাতে প্রায় দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার খাল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্রাই, উদয়পুর ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে গেছে কানমনা-হারাবতি ও নুনগোলা নামে প্রায় দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার খাল। কালাই পৌরসভা ও পুনট ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে গেছে আঁওড়া ও শিকটা-মাঠাই প্রায় প্রায় নামে ১৩ কিলোমিটার খাল এবং জিন্দারপুর ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে গেছে কাদিরপুর-বাখড়া নামে প্রায় ০৫ কিলোমিটার খাল। ঐসব খালে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে শতাধীক স্থানে ভেসাল(বেগ) জাল ও প্রতিটি খালের আশপাশে অবৈধভাবে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে প্রকাশ্যে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নির্বিচারে শিকার করছেন। তারা ঐসব খালের এপার-ওপার বরাবর বাঁশের বেড়া ও চাঁটাই দিয়ে মাঝে কিছু অংশ ফাঁকা রেখে সেখানে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে ভেসাল(বেগ) জাল, ফাঁস জাল, ঠুশি জাল, ঝার জাল, গুড়ি জাল, গড়া জাল ও নেট জাল পেতে রেখে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পর ঐসব জাল তুলে সংগ্রহ করা হয় ৭ থেকে ৮ কেজি দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। মৎস্য আইনানুযায়ী উন্মুক্ত জলাশয়ে, খাল-বিলে মাছ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, খালে কোনো কিছু দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দেয়া বা যে কোনো ধরণের ফাঁদ ব্যবহার ও স্থাপনা নির্মাণ এবং ভেসাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অথচ মৎস্য আইনকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে অবাধে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করা হচ্ছে। এর ফলে দিনের পর দিন ঐসব খালের মাঝে বেড়া ও জাল থাকার কারণে পানির স্রােত ও পানি নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্থসহ দু’পাশে কৃষিজমি ও ঘর-বাড়ি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ঐসব জালে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা মাগুর, কৈ, পুঁটি, শিং, টেংরা, দেশী চিংড়ি, টাকি, মলা, শোলসহ ছোট ছোট পোনামাছ। এছাড়ও ঐসব জালে আটকে পড়ে জলজ ব্যাঙ, গুইসাপ, কুচিয়া, সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী অকালে মারা গিয়ে পরিবেশের উপর জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভেসাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকারি জানান, ভেসাল(বেগ) জাল, ফাঁস জাল, ঠুশি জাল, ঝার জাল, গুড়ি জাল, গড়া জাল ও নেট জালের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলছে। তাদের বুঝ-জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছেন এই এলাকায় ঐসব জাল দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে। ঐসব জাল বিক্রির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তারা আরও জানান, কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ গোপনে জাল বিক্রি করছে। শুধু বড় বাজারগুলোতে নয়, উপজেলার অনেক হাট-বাজারেই কারেন্ট জাল পাওয়া যায়।
কালাই উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আসাদুজ্জামান বলেন, খালের উপরে বেড়া নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে খালের আশপাশে অনেক জমিতে দিনের পর দিন পানি বেধে থাকায় কৃষকের ধানসহ বিভিন্ন রবিশস্যের আবাদ করতে ব্যহত হচ্ছে।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি সবেমাত্র এই উপজেলাতে যোগদান করেছি। খালে বেড়া দিয়ে কেউ মাছ ধরতে পারবেনা, এইটা বেআইনি। উপজেলা ইউএনও স্যারের কথা বলে ঐবিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন পারভেজ মুঠোফোনে বলেন, খুবশিগগিরই এসব অবৈধ বেড়া ও জাল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।