শেরপুরে আবারো বেড়েছে বন্যার পানি। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলো। বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার (২৬ জুলাই) দুপুরে পাউবোর উপ-সহকারি প্রকৌশলী জিয়াসমিন খাতুন জানান, সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর চেল্লাাখালি, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। এর আগে ১৯ জুলাই থেকে টানা দুই দিন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় বন্যার পানি বাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর ৪টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নকলার ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে। এ অবস্থায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। আর এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকায় প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গত দশদিন যাবত শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এখন বন্যা দুর্গত এলাকায় পশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি স্থায়ী আকার ধারণ করায় বন্যার্তদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে পানি বাহিত নানা রোগ বালাই।
সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী গ্রামের হান্নান শেখ বলেন, এসব এলাকার প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ডুবে গেছে। এ ছাড়া চলতি রোপা-আমনের সব বীজতলা এখন পানির নিচে। গত এক সপ্তাহে পানি না কমায় পাট আর শাক সবজির ক্ষেত পচতে শুরু করেছে। এদিকে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি।
ক্ষতিগ্রস্ত আবদুল হক বলেন, বন্যায় ফসল আবাদ সব নষ্ট করে ফেলেছে। এখন খাবার মত ঘরে চাল পর্যন্ত নাই।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, বন্যায় হাঁস, মুরগী ও পোল্ট্রি খামার ভেসে গেছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে যেন গরুর শরীরে রোগ ব্যাধি দেখা না দেয় সে জন্য ভ্যাটেনারি সার্জনরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছেন। পাশাপাশি পশু- পাখির খামারিদের সেবা দিতে কন্ট্রোাল রুম খোলার প্রক্রিয়া চলমান আছে। বন্যায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনোয়ারুর রউফ বলেন, বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ধারণার চেয়ে বেশী স্থায়ী হচ্ছে। যে কারণে যতই সময় যাচ্ছে শাক-সবজির ক্ষেতগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৭৫৫ হেক্টর জমির রোপা-আমন বীজতলা পানির নিচে আছে। আর ৩৩০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওয়ালিউল হাসান বলেন, মাঝখানে বন্যার পানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু আজ তা আবার বেড়েছে। তিনি জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।