প্রতিবেশ দেশ ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি বেড়েছে। গত প্রায় দু’মাসে ভারত রেলপথে আমদানি হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টন পণ্য। পণ্য জট এড়িয়ে সহজে রেলপথে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পাশাপাশি এ খাত থেকে রেলের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী দিনে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমে আসবে। কারণ বেনাপোল স্থলবন্দরে জায়গার অভাবে আমদানিকৃত পণ্য রাখা যাচ্ছে না। যে কারণে বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় পেট্রাপোলে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। তাতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়। এ অবস্থায় আমদানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে রেলপথে পণ্য পরিবহন। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে বলে তারা মনে করছেন। বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারীর সংক্রমণ রোধে ভারত গত ২২ মার্চ রেল ও স্থলপথে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল। হঠাৎ বাণিজ্য বন্ধের ফলে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের হাজার হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে। পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি সচল হলেও এ পথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সচলে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে রেল কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, বন্দর ও ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে বিকল্পভাবে বাণিজ্য সচল করতে রেলপথে পার্সেল ভ্যানে দুই দেশের মধ্যে আমদানি বাণিজ্য চুক্তি হয়। ফলে বর্তমানে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথে কার্গো রেল, সাইডডোর কার্গো রেল এবং পার্সেল ভ্যানে সব ধরনের পণ্যের আমদানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, রেলে পণ্য পরিবহন হওয়ায় ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি বাণিজ্যে গতি বাড়ায় সরকারেরও রাজস্ব আয় বেড়েছে। রেলপথে বাণিজ্য প্রসার হওয়ায় বন্দর শ্রমিকরাও খুশি। কারণ করোনার কারণে কাজ কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছিলো। তাছাড়া স্থলপথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অবরোধ, হরতাল, শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় পণ্য পরিবহন করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা প্রায়ই লোকসানের কবলে পড়তো। এমনকি ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে অনেক ক্ষেত্রে এক মাসেরও অধিক সময় লেগে যেতো। রেলপথে সব ধরনের পণ্যের আমদানি করতে পারায় এখন আর সে সমস্যা নেই।
সূত্র আরো জানায়, করোনার অজুহাত দেখিয়ে ভারতের পেট্রাপোলের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মাসের পর মাস ট্রাক আটকে রেখে ফায়দা লুটছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় রেলপথে আমদানি বাণিজ্য। এভাবে চলতে থাকলে আশা করা যায় চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আসবে। গত জুলাইয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহন হয়েছে ৫১ হাজার ১২ টন, যা থেকে রেলের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২০ টাকা। আর চলতি আগস্টের ২০ দিনে পণ্য পরিবহন হয়েছে ২৮ হাজার টন, যা থেকে রাজস্ব পাওয়া গেছে দেড় কোটি টাকা।
এদিকে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের মতে, বন্দরে পণ্যের জট কাটাতে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও কাটছে না জায়গা সংকট। বর্তমানে সব মিলিয়ে বন্দরে ৩২টি শেড ও ১০টি ইয়ার্ড রয়েছে, যেখানে পণ্য ধারণক্ষমতা মাত্র ৫১ হাজার টন। কিন্তু প্রায়ই এর চেয়ে দ্বিগুণ, কখনো তিন গুণও পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। ফলে জায়গা সংকট ও পণ্যজটে বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। কারণ ভারত থেকে আসা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০টি পণ্য বোঝাই গাড়ি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু পণ্যজটের কারণে জুলাইয়ে প্রবেশ করেছে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০টি গাড়ি। আর এ সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য পেট্রাপোলে অপেক্ষা করেছে হাজার হাজার গাড়ি। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা রেলপথে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পাওয়াকে ব্যবসায়ের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের বেনাপোল শাখার চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরে জায়গা সংকট দীর্ঘদিনের। বারবার জায়গা বাড়ানোর দাবি করলেও কেউ আমলে নিচ্ছে না। বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে পেট্রাপোলে হাজারো পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এখন বিকল্প হিসেবে রেলপথ বেছে নেয়ায় পণ্যজট কমবে। তাতে আমদানিকারকরাও উপকৃত হবেন।
অন্যদিকে বনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, বেনাপোল বন্দরে পণ্য ধারণক্ষমতা মাত্র ৫১ হাজার টন। বর্তমানে বন্দরটিতে পণ্য রয়েছে দেড় লাখ টনেরও বেশি। স্থলপথের পাশাপাশি আমদানিকারকরা রেলপথে পণ্য আমদানি করায় বেনাপোলে যানজট কমেছে, বেড়েছে আমদানি। সরকারও বেশি রাজস্ব পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্দরে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ হয়েছে। তাতে বন্দরের পণ্য ধারণক্ষমতা বেড়েছে। তাছাড়া ২৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরো সাড়ে ১৬ একর অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা রয়েছে। শিগগিরই ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোলে কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। তাছাড়া ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। আর এসব বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল বন্দরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।