বাংলার মহাবীর বার ভূইয়ার অন্যতম একজন মসনদণ্ডই- আলা ঈসাা খানের ৪২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (বৃহস্প্রতিবার ১৭ সেপ্টেম্বর)। ১৫৯৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আজকের এই দিনে বৃহত্তর ভাটিরাজ্যের অধিপতি মসনদণ্ডই- আলা ঈশা খান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
লেখক আমিনুল হক সাদীর “ভাটিরাজ্যের অধিপতি মহাবীর ঈসা খান ইতিহাসে উপেক্ষিত” প্রবন্ধে লিখেছেন, ১৫৩৬ মতান্তরে ১৫৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর মতান্তরে ২৫ আগস্ট বিবাড়িয়া উপজেলার সরাইলে জন্ম গ্রহণ করেন মহাবীর ঈসা খান। তিনি প্রথমে সরাইলে পরবর্তীতে সোনারগাওয়ে রাজধানী স্থাপন করে পুর্ব বাংলার শাসক ছিলেন।
পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়িতে বৃহত্তর ভাটি রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। ৬২ বছরের মধ্যে ৩৬ টি বছরই মোঘলদের সাথে অবিরাম যুদ্ধের ফলে জীবনের উচ্ছলতায় ভাঁটা পড়ে যায় মহাবীর ঈশা খাঁনের।
১৫৯৯ খ্রিষ্টাদ্ধের দিকে ঈসা খাঁন কিছুদিনের বিশ্রামের জন্য সোনারগাঁও থেকে মহেশ্বরদী পরগণা বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের বক্তারপুর দুর্গের প্রাসাদভাটিতে গমণ করেন। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে শারিরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে যান। রাজকীয় চিকিৎসায় অবিরাম চেষ্টা করেও তাঁকে সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ হন। এই অবস্থায় ১৫৯৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ভাটিরাজ্যের অধিপতি মসনদণ্ডই- আলা ঈশা খান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
মহাবীরের জীবন ও কর্ম নিয়ে মাঠে গবেষণা করছেন ইতিহাস বিশ্লেষক ও শিলালিপি অনুবাদক কিশোরগঞ্জ আরকিওলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি আমিনুল হক সাদী। পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহাবীর ঈসা খানের শুন্যতা কখনও পুরণ হবার নয়। তিনি শুধু আমাদের কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির গর্ব নন সারা বাংলা তথা বিশ্বের গর্ব। এই মহাবীরের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থান ও দুর্গ আজ ইতিহাসে উপেক্ষিত। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মহাবীর ঈসা খানের স্মৃতি বিজড়িত জঙ্গলবাড়িটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করে একটি জাদুঘরে রুপান্তর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান অতিরিক্ত সচিব মোঃ হান্নান মিয়া এতদ্বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছরে এগারসিন্ধুদুর্গটিকে খনন কাজ করেছে। মহাবীর ঈসা খান এগারসিন্ধুরে জীবদ্দশায় এ দুর্গটিতে বাংলার বার ভূইয়াদের প্রধান মসনদণ্ডই-আলা বীর ঈশা খাঁ’র একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতেন। এ স্থানেই মুঘলদের সাথে তিনি অসম সাহসিকতার মাধ্যমে লড়েছিলেন এবং মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করেছিলেন। সমস্ত দুর্গ এলাকায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন ইট পাথরের ভগ্নাংশ। দুর্গের ভেতরে প্রাচীন জলাশয় রয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে বেবুদ রাজার দীঘি বলে পরিচিত। দীঘির পার্শ্বেই বেবুদ রাজার জমিদার বাড়ীর ভগ্নাংশ বিদ্যমান রয়েছে। ঈশা খাঁ’র দুর্গ নগরের পার্শ্বেই গরিবুল্লাহ শাহ নামক একজন সাধকের মাজারসহ অজানা বহু কবর রয়েছে।
প্রত্নপ্রেমীরা জানান, জ্গলবাড়ি দুর্গ ও এসারসিন্ধুরের ঐতিহ্য দেখে অভিভূত হয়েছি। মহাবীরের অনেক স্মৃতিবিজড়িত দুর্গদ্বয়টিকে দেখে ভাল লেগেছে। সবকিছু মিলিয়ে এগারসিন্দুর দুর্গ এলাকাটি খুবই সুন্দর যা পর্যটনের জন্য অনুকূল পরিবেশ। এই দুর্গটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে পারলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিশ্ব ইতিহাসে বাংলার মহাবীর ঈশা খাঁ’র ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।
মহাবীর ঈসা খানের পনেরতম পুরুষ দেওয়ান জামাল দাদ খান জানান, বাংলার মহাবীর বার ভূইয়ার অন্যতম মসনদণ্ডই- আলা ঈসাা খানের ৪২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে করোনাজনিত কারণে এবারে আলোচনাসভা হচ্ছে না তবে ঈসা খার স্মৃতি বিজড়িত জঙ্গলবাড়ি শাহী মসজিদে দোয়া করা হবে বলে জানিয়েছেন।