একত্রিশ হাজার শ্রমিক তার শ্রমশক্তি বিক্রী করার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে স্থায়ীভাবে বঞ্চিত হয়ে অনিশ্চিত জীবন যাত্রার দিকে পা বাড়ায়। প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশ শ্রমিক শ্রেণীর কোন গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। শ্রমিক শ্রেণীর এই গণতান্ত্রিক অধিকার স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এমন গণতান্ত্রিক বিপ্লব যাতে কারখানায় পরপর দুই বছর লোকসান দেখা দিলে মালিককে তার মালিকানা বা স্বত্বচ্যুত করে অন্য ব্যক্তির নিকট মালিকানা হস্তান্তর করা যায়। হস্তান্তর প্রক্রিয়ার নির্বাহী আদেশ দাতা হবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রকৌশলী শ্রমিক কমিটি। মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার যুক্তিটা এখানে যে, শ্রমশক্তিও যেমন মুক্ত বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল,উদ্যোগ ও সাংগঠনিক দক্ষতাও (মালিকরা যেমন দাবি করেন) তেমন বাজার অর্থ-ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত। এখানেই গণতান্ত্রিকতা। এ গণতন্ত্র কায়েম করতে পারে কেবল একটি গণতান্ত্রিক বিপ্লব, জাতীয় অনেক নামেই অভিহিত করা যেতে পারে যথা: নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব, জাতীয় জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব অথবা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লবে যৌথ নেতৃত্ব দেবে সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণীর একটি রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক ধনিক শ্রেণীর রাজনৈতিক দল,কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রাজনৈতিক দল। তবে গণতান্ত্রিক এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য দীর্ঘ রাজনৈতিক কর্ম-প্রচষ্টা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের লুটোরা বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণকে সাধারণ বুর্জোয়া অধিকার দিতেও নারাজ। তারা মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার অর্থাৎ ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। সন্দেহমূলক ধারনার বাংলাদেশ অধিদপ্তর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও আটক করে জেলখানায় বন্দি রাখা হয়। কোন কোন সময় আটককৃত ব্যক্তিকে থানা-হাজতে উপযুক্ত বিনামুতিতে ও তাদের অজ্ঞাতসারে রাখা হয়। সুনির্দিষ্ট মামলা ব্যতিরেকে জেলখানায় আটক রাখার সময় আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা তৈরী করা হয়। এগুলো সবই লুটেরা বুর্জোয়াদের রীতিনীতি, সবই গণতান্ত্রিক আচরণ ও নিতীমালার পরিপন্থী।
লুটেরা বুর্জোয়া শাসকঘোষ্টি সর্ববৃহৎ পাটকল বিলুপ্ত করার কয়েকদিন পরই রাজকার্যালয়ে ভাগ-বাটোয়ার চূড়ান্ত ফয়সালা করতে বসে। তিনশত বিশ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সর্ববৃহৎ পাটকলটি বিলুপ্ত করার প্রেক্ষিতে ভূসম্পত্তি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের জন্য শিল্পপতি,ব্যবসায়ী,বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সরকার প্রধান মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সর্ববৃহৎ পাটকল বিলুপ্ত করার ফলে শাসক-শোষক গোষ্ঠী এবং শ্রমশক্তি লুন্ঠনকারীদের বৈশিষ্ট্য জনসমক্ষে ধরা পড়ে।
১. ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের এক নেতা বলেন, পচিঁশ হাজার শ্রমিককে জবাই করে ফেলা হয়েছে; কিন্তু যারা পাটকলটিতে বছর দুইশত কোটি টাকা লোকসানের জন্য দায়ী তাদেরকে শাৎিস্ত দেওয়া হয়নি। লোকসানের প্রকৃত কারণ তদন্ত করে দেখা হয়নি।
২. পাটকলটি বিলুপ্ত না করে ব্যক্তি মালিকের বিক্রি করে দেওয়া যেত।
৩. সর্ববৃহৎ পাটকলটি বিলুপ্ত করায় বিষয়ে চলতে থাকা পার্লামেন্ট অধিবেশনে কোন আলোচনা হয়নি।
৪. পাটকল বিলুপ্ত করা প্রসঙ্গে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে মতামত নেয়া হয়নি।
৫. ত্রিশ-চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিকগণ তাদের শ্রমশক্তি বিক্রির বাজার বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়ে কোন মতামত রাখতে পারেনি। এটাও মুক্ত বাজার অর্থনীতির পরিপন্থি। উল্লিখিত সবগুলো বিষয়ই শ্রমিক শ্রেনীর গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে। চাষীর চাষ করার জমি ও হাতিয়ার, শ্রমিকের শ্রমশক্তি বিক্রির বাজার তৈরির জন্য একটি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক বিপ্লব।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের ১৪৮টি ধারার মধ্যে বাংলাদেশ মানে মাত্র ৩২টি। এতদসত্ত্বেও শ্রমিকগণ কারখানা অঞ্চলে মালিকের পার্টিকে ভোট দেয়। গ্রামাঞ্চলে কৃষক, ক্ষেতমজুর সম্পত্তিবান বা জোতদারের পক্ষে ভোট দেয়। ভোট পাওয়ার জন্য সম্পত্তি মালিক, জোতদার ও কারখানা মালিক বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা, পেশি-শক্তি, সন্ত্রাস, ছল-চাতুরি, মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করে। ভুলিয়ে ভালিয়ে উস্কানি দিয়ে ভোট আদায় করে। ভোট দেওয়া যদি গণতন্ত্র হয় তা হলে দেখা যায়, কেউদশ টাকা পেয়ে খুশি হয়ে ভোট দিতে যায়, আর কেউ ভোট পাওয়ার জন্য দশ লাখ টাকা খরচ করে সংসদ সদস্য হয়ে খুশি হয় আর রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে কোটি কোটি কামাইয়ের পথ তৈরি করে। আর কেউ ভোটারদেরকে দশ টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য মধ্যস্থতা করে খুশি হয়। এই মধ্যস্থকারীরা তৃণমূল পর্যায়ে ধনিক শ্রেণীর দলের রাজনৈতিক কর্মী। এটা হল এখনকার রাজনীতি।
আর অর্থনীতি হল এক দ্রব্যেরই এক এক দোকানে এক এক মূল্য। মুক্তবাজারের অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাজার মূল্য নির্ধারিত হয় উৎপাদন খরচ+পুঁজিপতির মুনাফা দিয়ে, ভোগকারীর প্রয়োজন আর চাহিদা দিয়ে নয়। ভোগকারীর ক্রয়ক্ষমতা কম থাকলে বাজারে জিনিস বেশি বিক্রি হয় না। জিনিস বিক্রি না-হলে মুনাফা কম হয়। তখন পুঁজিপতি কারখানা মালিক জিনিস কম উৎপাদন করায়। ভোগ্যদ্রব্যের কৃত্তিম অভাব সৃষ্টি করে। সাথে সাথে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি মূল্য দিয়ে জিনিস বিক্রি করলে কম জিনিসি বিক্রি হলেও কাঙ্খিত মুনাফা পাওয়া যায়। জিনিসের বাজারে পণ্য সরবারহ বেশি থাকলে এক মূল্য, পণ সরবারহ কম থাকলে আর এক মূল্য। সাধারণ ভোগকারী জনগণের চাহিদা কোন মূল্য নেই। জনগণের কোন মূল্য নেই। এখানে গণতন্ত্র নেই, গণের কোন মূল্য নেই। সুতরাং তাদের তন্ত্রেরও কোন মূল্য নেই। জনগণের চাহিদার কোন কোন মূল্য নেই। চাহিদা থাকলেও ক্রয়ক্ষমতা নেই। অবিকাশিত কিলাঙ্গ অর্থনীতির কারণে মানুষেল ক্রয়ক্ষমতা নেই। সর্বত্রই গ্রাম থেকে চলে আসা অনুপস্থিত ভূস্বামী, শহরে সুযোগ-সন্ধানী সুভিধাবাদী লুটেরা অসভ্য জংলিদের রাজত্ব। এরা কারখানার নামের কোটি কোটি টাকা ঋণ নেয় কিন্তু কারখানা বাড়ায় না। বরং ঋণ নেয়া টাকয় অন্যত্র বিদেশি মালপত্র বেচাকেনার ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলে। বিনা অজুহাতে কারখানা বন্ধ রাখে। লে-অফ করে রাখে। দশ-বিশ বছর চাকরি করা শ্রমিকদেরকে ছাঁটাই করে। (শ্রমিকদের ভাষায়-পেটে লাথ্থি দিয়ে বের করে দেয়।) ধনিকশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা বলে যে এরই নাম গণতন্ত্র। কিন্তু আসলে এটা ধনিক্েরশনণীর গণতন্ত্র। এখানে মালিকদের মত শ্রমিকদের গণতন্ত্র নেই, কাজ করে খেযে-পরে বেচেঁ থাকার সম অধিকার নেই। মালিকের অধিকার আছে কারখানা স্থাপন করে মুনাফা অর্জন করার। কোটি কোটি টাকা কামানোর। কিন্তু শ্রমিকের সুযোগ ও অধিকার নেই কারখানায় কাজ করে খেটে খাওয়ার। মালিক যে-কোন সময় কাঁচা মালের অভাব দেখিয়ে অথবা অন্য যে-কোন অজুহাতে শ্রমিককে ছাঁটাই করতে পারে বা কারখানা বন্ধ করতে পারে। শ্রমিক মালিককে সেলাম ঠুকলো কি না ঠুকলো তাতে মালিকের কিছু যায় আসে না। কারখানার শ্রমিক ঘন্টার পর ঘন্টা খাটলেই হল, মুনাফা তথা উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হলেই হল, মালিক এটাই চায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এভাবে খাটতে খাটতে শ্রমিক যদি অপুষ্টি ও যক্ষ্মা হয়ে মারাও যায় াততে মালিকের কিছুই যায় আসে না। শ্রমিক বিদ্রোহী হয়ে উঠলে, কায়দা-কানুন করে তাদেরকে দমন করা হয়, দমিয়ে দেওয়া হয় অথবা সামান্য কিছু দিয়ে তুষ্ট করা হয়। এখানে জনগণের গণতন্ত্র নেই। শতকরা পাঁচজন মানে মুষ্টিমেয় কিছু ধনিক লোকেন গণতন্ত্র। বুর্জোয়া গণতন্ত্র।
অন্যদিকে রাজা, নওয়াব, জায়গিরদার, জমিদার, তালুকদার, জোতদারদের রাজত্বে গণতন্ত্র ছিলনা, থাকে না। এরা বক্তির স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। চাষী বা কারিগরকে মানুষ বলেই গণনা করে না। এরা চায় অন্যের নিঃশর্ত আনুগথ্য ও অধীনতা। চাষী বা কারিগরকে মানুষ বলেই গণনা করে না। এরা চায় অন্যের নিঃশর্ত আনুগত্য ও অধীনতা। চাসী বা প্রজা রাজা জমিদার বা ভূস্বামীকে সেলাম না-ঠুকলে তার গর্দান যায়। প্রজা, রাজা বা ভূস্বামীর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারতো না। জমিদার বাড়ির সামনে ছাতা মাথায় বা জুতা পায়ে হেঁটে যেতে পারতো না। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে খাজনা দিতে না পারলে বিষাক্ত শিং মাছÑভরতি কুয়ার পানির মধ্যে গলা পর্যন্ত চুবিয়ে রাখত। বেয়াদবদেরকে বাঁশডলা দিত।
আমাদের দেশে বিগত প্রয়ে একশ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে অনেক গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধিত হয়েছে। ভোটাধিকার ছিল না, ভোটাধিখার হয়েছে। আগে ট্যাক্সদাতাভিত্তিক সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার ছিল না, ভোটাধিকার হয়েছে। আগে ট্যাক্সদাতাভিৎিক সীমাবদ্ধ ভোটাধিকার ছিল, তারপর বয়সভিত্তিক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার হয়েছে। নারীদের ভোটাধিকার ছিল না, নারীদের ভোটাধিকার হয়েছে। গোপন ভোট ব্যবস্থা হয়েছে। এটা এখন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সংস্থা ও সংগঠন ভোট-ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের নেতৃত্বে নির্বাচিত করে। নিরাপত্তা থাকলে যে-কেউ যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে। যদিও সন্ত্রাস দিয়ে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করা যায়, কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে ভোটারদের প্রভাবিত করা যায় না। অবশ্য টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায়। ভোটতন্ত্র তার নিরপেক্ষকতায় হারায়। গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এভাবে, গণতন্ত্রকার্যকর করার একটি প্রযুক্তি ও যন্ত্রকৌশল (মেকানিজম) তার ব্যবহারযোগ্যতাও হারায়। গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রক্রিয়া অপব্যবহারের ফলে গণতান্ত্রিক বিপ্লবে পরিণত হয় না।
অন্যদিকে, জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদের ফলে ও ভোট ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে
মাতব্বরি ফলাতে চেষ্টা করে। অধঃস্তদেরকে (আদরের ভাব দেখিয়ে) তুই তুকারি করে। অথবা আবার ’কেউ গাছেরও ভাব তলারও কুড়াব’ এই নীতিতে বিশ্বসী হয়ে অনুপস্থিত ভুস্বামী/জোতদার চিসাবে চাষীদের ভাগ বসায়। ডাইনিং টেবিলের সামনে বসে আমাদের বাড়ীর ক্ষেতের আতপ চাউলের প্রশংসা করে। বর্গাচাষী ও ক্ষেতমজুরের মন্তানেরা চাকর দাসী হয়ে খেদমত করে। নারীকে ধর্ম,ভদ্রতা ও সভ্যতা-ভব্যতার ভয় দেখেয়ে সংকীর্ণ পরিবেশে আগলে রাখতে চেষ্টা করে। পুরুষ-প্রধান সমাজে জ্রকাশ্যে স্মার্ট, গণতান্ত্রিক আচরণ-দুরস্ত পুরুষ বাড়িতে গিয়ে বউ পেটায় অথবা বউয়ের সাথে অবনিবনায় বউকে হত্যাও করে। পাতিসামন্ততন্ত্রী+পাতিসুর্জোয়া খিচুরি সংস্কৃতিতে ললিত তরুণ প্রজ¤œ একই পঙ্কিল পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশু-কিশোরী-যুবতী নারীর কাছে খোলামেলা ঘনিষ্ঠ হতে পারেনা অথবা িৈবক আকর্ষণে দূরেও ঠেলতে পারেনা। একাধিক সংখ্যায় অথবা দল বেঁধেধর্ষণ করে, তারপর হত্যা করে। এগুলো সবই সামন্ততান্ত্রিক অথবা আরও প্রাচীন বর্বর গোষ্ঠী সমাজের (?) আচার আচরণ, ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাসম্মত নয়, ধনবাদী গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। বাংলাদেশে নারীর প্রতি আচরণ মানবিক নয়,গণতান্ত্রিক নয়। এটা বুর্জোয়া ও সা¤্রাজক্যবাদী ঋণদাতা মহাজনদের ও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পুরুষের সাথে নারীর প্রকৃত সম অধিকার ও সম মর্যাদা প্রতিষ্ঠা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের একটি আংশ। ২০০২ সনের মার্চ মাসের প্যারিস বৈঠকে যে কতিপয় কারণে দরিদ্র খাতকের বেশে হাজির -হওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে ঋণ-সাহায্য দার অস্বীকার করা হয়, সে-সময় বাংলাদেশে না রী নির্যাতন উল্লিখিত কতিপয় কারণের মধ্যে একটি। বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের নারীগণ তাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বোরখা পরিধান করেন। তারা মাথার তালু উপরিভাগ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত কাপড়ে আকৃত করে ঘরের বাইরে বের হন।হাতে ও পাওয় মোজা পরেন অনেক সময় চোখেও কালো চশমা পরেন, যাতে স্বামী ব্যতিত অন্য পুরুষ তার দেহের কোন একটি অংশকেও চোখে দেখতে না পারেন।অনেকে বলেন, এটা স্বাস্থ্য ও ইসলামি বিধিসম্মত। আর অনেকে বলেন যে, নারীও মানুষ, আর মানুষ বলেই তার মাঝেও সকল মানবিক প্রবৃত্তি বিরাজমান থাকে সুতরাং বোরখা পরা নারীও পুরুষকে চোখে দেখতে পারেন। তাতে করে তার মাঝেও স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক মানবিক প্রবৃত্তি কাজ করতে পারে। তিনিও (তার চোখে) সুন্দর পুরুষ দেখে মুগ্ধ অথবা অসুন্দর পুরুষ দেখে বিরক্ত হতে পারেন। তার মধ্যেও পাপবোধ জাগ্রত অথবা সঞ্চারিত হতে পারে। অন্যদিকে এটাও সত্য যে, নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নারীকে, তার দেহকে করে তোলা হয়েছে প্রচারের অস্ত্র। নারীর দেহকে করে তোলা হয়েছে পণ্য। নারীর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এইসব বিষয়কে বিবেচনায আনতে শুরু কবেছে। সারা বিশ্বের নারী সমা জেন্ডর-ইস্যুকে সকলের সামনে তুরে ধরেছে। বাংলাদেশের লায়লা সামাদ (প্রয়াত), তসলীমা নাসরিন অথবা জার্মানীর সেই মুসলিম নারী যিনি মাথায় স্কার্ফ পরার জন্য আদালতে মামলা লড়ছেন, সবাই তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দ¦ারা অনুপ্রাণিত হয়েই লড়াই করেছেন অথবা করছেন। দেশের ভূস্বামীরা গ্রামের ঠিকানায় সংসদ নির্বাচিত হয়ে বাতীয় সম্পদ লুন্ঠন ও দেশ। বিক্রির কার্যকলাপে শরিক হয়। কিন্তু গ্রামের জমিতে আধুনিক খামার গড়ে তোলেনা।এরা বিষ্ঠাও ত্যাগ করেনা, পথও ছাড়েনা। গ্রামাঞ্চলে নির্জন পায়ে চলা পথে চলতে গিয়ে অনক বর্বর লোককে মল-মূত্র ত্যাগে নিরত থাকতে দেখা যায়। থমকে দাঁড়াতে হয়। পথ চলতে গেলে এদেরকে লাঠি পেটা করে তাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। গ্রামের কৃষি থেকে অনুপস্থিত ভূস্বামী ও অকৃষকদেরকে উচ্ছেদ ব্যতিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প কোন উপায় নেউ রক্ত-বংশগত আভিাজাত্যের শক্তি কিছুটা স্থানান্তরিত হয় শহর ও নগরাঞ্চলে। সামরিক বেসামরিক অমলাতন্ত্রে। ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং কিছু পরিমাণে পরদেশী পুজিনির্ভর শিল্পকারখানায়।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিণতিতে কমবেশি গণতান্ত্রিক সংস্কার হয়। গণতান্ত্রিক সংস্কারের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল ১৯৫০ এর জমিদারি অধিগ্রহণ আইন। ১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সনের ভূখন্ডগত রাজনৈতিক স্বাধীনতার আন্দোলন ইত্যাদিও বৃহৎ গণতান্ত্রিক সংস্কারের আন্দোলন। এগুলো বিপ্লব নয়। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি বহিঃশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নযোগ্য। রাষ্ট্রীয় স্বধীনতা ও সার্বভৌমত্ব গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। এখানে তাই গণতান্ত্রিক বিপ্লব অসমাপ্ত।
বিপ্লব হাহলে কি? বিপ্লব হল আমূল বা মূলশুদ্ধ বা ভিত্তিসমেত পূর্ণাঙ্গ ও পূর্ণরূপের পরিবর্তন। আর সংস্কার হল প্রচলিত কাঠামো অক্ষুণœ বেখে চলমান পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে কিছুটা সঙ্গতিক স্বর্থে পুরানো কাঠামোর কিছু কিছু অংশ মেরামত করে নেওয়া। বাংলা অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে এর রূপটা কি?