নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর ৪ আসনের জনপ্রিয় ও তরুন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সাথে যোগ দিলেন চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচনের চেয়াম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো. কাউসার। হাফেজ মো. কাউসার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী জাফরউল্ল্যাহর সমর্থক ছিলেন। শুক্রবার রাতে সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর বাড়ি ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এ যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এসময় যোগদান সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জনাব মুজিবর রহমান নিক্সন চৌধুরী এমপির প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ও চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী জনাব মো. কাউসারের যোগদান অনুষ্ঠান। প্রচারে চরভদ্রাসনে সর্বস্তরের জনগণ’।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নৌকা প্রতীকের রেপ্লিকা ও ফুলের তোড়া এমপি নিক্সনের হাতে তুলে দিয়ে যোগদান করেন মো. কাউসার। একই সাথে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে নিক্সনের সাথে যোগ দেন চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের সভাপতি মো. রুবেল মোল্লা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্লা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মৃধা।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ অক্টেবর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসার মৃত্যুর কারণে উপজেলার চেয়ারম্যান পদটি শূণ্য হয়ে যায়। গত ২৯ মার্চ এ উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
ওই নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসার হোসেনের নাম ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যহ।
মহামারী করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ ওই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক প্রাজ্ঞাপনে আগামী ১০ অক্টোবর এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন।
সাংসদ নিক্সনের সাথে যোগ দিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাউসার শুক্রবার বিকেলে সাংসদের ব্রাহ্মণপাড়াস্থ বাস ভবনে আসেন। পরে রাতে যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন।
ওই যোগদান অনুষ্ঠানে নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কাউসার হোসেন বলেন, আমি ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর বিশ্বস্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু তিনি (কাজী জাফরউল্লাহ) মানুষের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেন না। আমি ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে এ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। কিন্তু নির্বাচনে জিততে পারিনি। কাজী জাফরউল্ল্যাহও দুই দুই বার নৌকা প্রতীক নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর কাছে পরাজীত হয়েছে। করোনা দুর্যোগের গত ৬ মাস কাজী জাফরউল্ল্যাহ ঢাকার বাসা থেকে বের হয়নি। অথচ নিক্সন চৌধুরী প্রতিটি অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দিয়ে আসছে। যার রাজনীতি করি সে যদি ঘরে বসে থাকে তাহলে জনগনের কাছে আমাদের যাওয়ার কোন অবস্থা থাকে না।
তিনি বলেন, এখন নির্বাচনের আগে আমার উপলব্ধি হয়েছে এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থন ছাড়া এ নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। তাই অনেক ভেবে চিন্তে পরামর্শ করে আমি সাংসদের সাথে দেখা করেছি এবং যোগদানের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, নৌকা হারলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ কালো হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এমপি নিক্সনের হাত ধরেছি আমি।
তিনি আরো বলেন, এবার দেখবো কাজী জাফরউল্ল্যাহ নৌকাকে কতটা ভালবাসেন। তিনি ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিষেধ করেছেন নৌকার পক্ষে কাজ করতে। কাল থেকে সত্যিই যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ না করেন, তাহলে বুজবো কাজী জাফরউল্ল্যাহ নৌকাকে ভালবাসেন না, তিনি শুধু মাত্র এমপি নিক্সনের সাথে শত্রুতাকেই বড় করে দেখেন।
তিনি বলেন, এ যোগদান অনুষ্ঠান চরভদ্রাসনে করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেখানে করা হলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘিত হতো। এ কারণে আমি সাংসদের বাড়িতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।
অনুষ্ঠানে এমপি নিক্সন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকেও বলেছি আমি নৌকার বিরুদ্ধে রাজনীতি করি না, আমি একটি ব্যাক্তির বিরুদ্ধে রাজনীতি করি, যার কাছে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার মানুষ দীর্ঘীদন শোষিত ও নির্যাতিত ছিল। তিনি বলেন, প্রথম বার ৩ থানার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে কাজী জাফরউল্ল্যাহ ও তার বাহিনীর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে আর দ্বীতিয়বার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে আমার উন্নয়ন দেখে।
এমপি নিক্সন বলেন, আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রক্ত। আমার পরিবার আওয়ামী লীগের পরিবার। আজকে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীও আমার পিছনে জয়বাংলা শ্লোগান দেয়, আমি মনে করি এটা আমার ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জন।
তিনি বলেন, ‘কাজী জাফরুল্লাহ গত ৬ মাসেও এলাকায় আসেননি। আমি কাজী জাফরুল্লাহর মতো নৌকা বাইনা। আমি বঙ্গবন্ধুর নৌকা বাই। বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই আমি এলাকাবাসীর জন্য কাজ করছি।’ তিনি তার সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার আলী মোল্লার প্রতি সহমর্মিতা জানান কাউছারকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য।
এসময় এমপি নিক্সন বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এবার আমি নিক্সন চৌধুরী নৌকার প্রার্থীকে নিয়ে নামছি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিবো ইনশাআল্লাহ।
এসময় এমপি নিক্সন চৌধুরী উপস্থিত হাজার হাজার জনগনকে সাথে নিয়ে নৌকা নৌকা এবং শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা শ্লোগান দেন।