পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিগত ২০১৭ সালে যমুনা নদীর ভাঙনরোধ ও পানিপ্রবাহ সচল রাখার লক্ষ্যে ৫৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। নদীর মাঝ বরাবর ক্ষীণকায় পানির প্রবাহকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করার লক্ষ্যে নেয়া এ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশাও পাউবো কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স ওই সময় প্রণয়ন করে। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘ ৩ বছরেও যমুনার নদীর খননকাজ শুরু করা যায়নি। ফলে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় নদীর গতি-প্রকৃতিও পরিবর্তন হয়েছে। তাই আগের নকশা অনুযায়ী খননকাজ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য নতুন করে নকশা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে সময়ের পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যমুনা নদী ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য দুটি প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয় ৫৩৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। প্রথম প্যাকেজে টাঙ্গাইল জেলার কাউলিবাড়ী হতে শাখারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নদীর প্রতিরক্ষা (চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য নদীর উভয় পার রক্ষাবাঁধ) কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ প্যাকেজের আওতাধীন ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যমুনা নদীর পানিপ্রবাহ সচল হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনও রোধ হবে। তাতে উভয় তীরের সম্পদ রক্ষা পাবে। কিন্তু সময়ক্ষেপণ হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।
সূত্র জানায়, মূলত দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে গত বছর খনন (ড্রেজিং) করা সম্ভব হয়নি। আর চলতি বছর টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি-ওয়ার্ক এখনো শুরু হয়নি। নকশা প্রণয়নের সময় নদী যে অবস্থায় ছিল বর্তমানে নদী ওই অবস্থায় নেই। পলি পড়ে ভরাট হওয়া জায়গার পরিমাণ বেড়েছে। তাতে দরপত্র অনুযায়ী যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা, তার চেয়ে বেশি খনন করতে হবে। আর তাহলে ডিপিপি পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। ফলে বাড়বে প্রকল্প ব্যয়ও। যদিও প্রকল্পের ঠিকাদাররা ড্রেজিং করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দরপত্র অনুযায়ী ৮টি প্যাকেজে ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। গত বছর এ প্রকল্পের সব দরপত্র একত্রে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে টাস্কফোর্স থেকে পৃথকভাবে কাজ না করে একত্রে শুরু করার জন্য বলা হয়েছিল। সে মোতাবেক গতবছর নদী ড্রেজিং করা হয়নি। আর যৌথ প্রি-ওয়ার্ক না হওয়ার কারণে চলতি বছর একত্রে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তাছাড়া টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি-ওয়ার্ক সম্পন্ন হলে ৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। ড্রেজিংয়ের কাজের শুরু হবে জামালপুর জেলার পিংনা থেকে এবং শেষ হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ১০ কিলোমিটার উজানে টাঙ্গাইলের অর্জুনা নামক স্থানে এসে।
সূত্র আরো জানায়, সহসাই যমুনা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হওয়া প্রয়োজন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদাররা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে। যথাসময়ে খনন কাজ শুরু করা না গেলে চলতি বছর এ কাজ সম্পন্ন করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পাউবোর টাস্কফোর্স প্রধান (এডিজি) কাজী তোফায়েল হোসেন জানান, যৌথ প্রি-ওয়ার্কের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে সার্ভের কাজ শুরু হবে। ইকো সাউন্ডের মাধ্যমে এই সার্ভে সম্পন্ন করা হবে। গত বছর দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় খননকাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। যেন চলতি বছর সবাই একত্রে কাজ করতে পারে। ৩ বছর আগেই এ প্রকল্পের ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ওই সময় নদীর যে অবস্থা ছিল এখন সে অবস্থায় রয়েছে কিনা তা দেখা হবে। যদি পলির পরিমাণ বাড়ে তাহলে মাটি খননের পরিমাণও বাড়বে। আর এমনটি হলে প্রকল্প প্রস্তাবনা আবারো মূল্যায়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পর সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পাউবো মহাপরিচালক প্রকৌশলী এএম আমিনুল হক জানান, যমুনা নদীর খননকাজ কোনোভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় পাউবোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন নদী-খাল ড্রেজিং নিয়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই। যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে। নদ-নদী খননের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ রক্ষা, নৌপথ সচল করা, কৃষিকাজে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং নদীতে সারা বছর পানি ধরে রাখতে পাউবোর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। যমুনা নদীর খননকাজ দ্রুত শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।