পটুয়াখালীর কলাপাড়া ৫০ শয্যা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জবেদা বেগম নামের এক নারীর (৭০) মৃত্যুর ঘটনায় এক নারী চিকিৎসককে লাঞ্চিত করা অভিযোগ উঠেছে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হামলাকারী ১০ জনের বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় মামলা করেছে চিকিৎসক তনিমা পারভীন রুমা। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ রোগীর স্বজনরা ওই চিকিৎসকের শাস্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। তবে কলাপাড়া স্বাস্থ্য প্রশাসক জানায়, চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে বরিশাল রেফার করলেও স্বজনরা তাকে নিতে দেরি করায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আর পুলিশ জানায় খুব গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
জানা যায়,গত ৭ অক্টোবর সন্ধা ৭টার পর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সুলতান মিয়ার স্ত্রী সত্তোরোর্ধ জবেদা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা। হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী সন্ধা ৭টা ৪০ মিনিটে তাকে ভর্তি করার পর জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তনিমা পারভীন রুমা তাকে জরুরী চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে তার নিজ কক্ষে যান। এর কিছুক্ষণ পরই রোগী মারা যায়।
মৃত রোগীর স্বজন বাবুল মিয়া, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রাত আটটার দিকে জবেদা বেগম শ্বাসকষ্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক তনিমা পারভীন রুমাকে তার কক্ষে ডাকতে গেলে তখন রোগীকে না দেখে সে ফেসবুকে ব্যস্ত ছিলেন এবং রেফার করা রোগীকে আর দেখবেন বলে স্বজনদের জানিয়ে দেয়। এ সময় রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে কান্নাকাটি করলে ডাঃ তনিমা পারভীন রোগীকে দ্বিতীয়বার রোগীর পরীক্ষা করেন এবং মৃত ঘোষনা করেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ জেএইচ খান লেলীন জানান, রোগী মৃত্যুর পরই রোগীর স্বজনরা ডাঃ তনিমা পারভীন ও তার স্বামী ডাঃ মাহমুদ মুরশীদ, স্যাকমো পলাশ হালদারকে শারীরিকভাবে শাঞ্চিত করে এবং জীবন নাশের হুমকি দেয়। লাঠি নিয়ে চিকিৎসককে ধাওয়া করে। চিকিৎসক দৌড়ে হাসপাতালের একটি কক্ষে অবস্থান নিয়ে রক্ষা পায়। যা সিসিটিভ ফুটেজে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ৮ অক্টোবর ডাঃ তনিমা পারভীন বাদী হয়ে নিজাম, আলাউদ্দিন, পাপড়ী, খোকন, মামুন, তপন, হিমন, মিরাজ, রিয়াজ ও তনময়কে আসামি করে অজ্ঞাত ৩০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে এ লাঞ্চিতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মৃত রোগীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন মিয়া, স্বজন ইশরাক জুবায়ের ও মরিয়ম পাখি। তাদের অভিযোগ ফেসবুকে ব্যস্ত না থেকে চিকিৎসক যদি রোগীকে ওই সময় দেখত্ তাহলে হয়তো বাঁচানো যেতো। কিন্তু এখন তাদের স্বজনও মারা গেছে উল্টো তাদের মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। পুলিশও তাদের অভিযোগ গ্রহন করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে মৃত জবেদার ভাইয়ের ছেলে মহসীন উদ্দিন হিরন বলেন, হাসপাতালে রোগীকে নেয়া হয়েছে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু চিকিৎসকের অবহেলায় যদি রোগী মারা যায় এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। উল্টো তাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ তারা থানায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তাদের অভিযোগ গ্রহন করেন।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনা পারভীন সীমা বলেন, তারা বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রশাসককে সমাধানের জন্য বলেছেন। কিন্তু তিঁনি সমাধান না করে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।
তবে ঘটনার দিন (৭ অক্টোবর) রাতে রোগীর স্বজনদের হাতে লাঞ্চিত চিকিৎসক তনিমা পারভীন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেয়া যায়নি। তিনি বর্তমানে বরিশালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়সহ সচেতন মহলের বক্তব্য কর্তব্যরত একজন নারী চিকিৎসকের উপর হামলা নিন্দনীয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন এবং চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা হয়েছে কিনা তার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। একই সাথে মামলায় যাতে কোন নিরীহ মানুষ হয়রানী না হয় এজন্য পুলিশের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি করেন।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার বলেন, রোগীকে সঠিক ভাবে চিকিৎসা দেয়ার পর স্বজনদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ডাক্তারের উপর হামলা ও লাঞ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থানায় মামলা করা হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। মামলাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগের কথা তিঁনি অস্বীকার করেন।