করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে দূর্গাপূজায় স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি গাইডলাইন মেনে এ বছর ধর্মীয় উপাচার পালনের জন্য হিন্দু ধর্মীবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো. আবু মারুফ হোসেন,। তিনি বলেছেন, 'ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই। যার যার ধর্ম, সেই পালন করবে। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য বিশ্বে প্রশংসিত। কিন্তু এ বছর আমাদেরকে দূর্গাপূর্জায় কিছুটা বিধিনিষেধ মানতেই হবে। বিশ্বজুড়ে আবারও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। একারণে পূজা মন্ডপে সমবেত সবার স্বাস্থবিধি নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের গাইডলাইন মানতেই হবে। নইলে মারাত্মকভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে'।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে শারদীয় দূর্গোৎসব উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ভিন্ন ধর্মের নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। আরপিএমপি'র তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা প্রাঙ্গণে সভার আয়োজন করা হয়।
এতে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো. আবু মারুফ হোসেন, করোনাভাইরাস এখনো অনিয়ন্ত্রিত। কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। দ্বিতীয় দফায় বিশ্বের অনেক দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটি সবার জন্য উদ্বেগের। এ রকম পরিস্েিথতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও সুস্থ্যতার ব্যাপারে সজাগ থাকার বিকল্প নেই। এজন্য আমাদেরকে দূর্গোৎসবে গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। এ বছর দূর্গাপূজার শোভাযাত্রা ও প্রসাদ বিতরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দেয়া ১১টি বিধিনিষেধ মানতে হবে। এটি সরকারি নির্দেশনা'।
মতবিনিময় সভায় সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের গাইডলাইন তুলে ধরে বলা হয়, এবার দূর্গাপূজায় মন্দির প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ পৃথক ও নির্দিষ্ট থাকতে হবে। পূজাম-পে আগত ব্যক্তিবর্গ নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে দুই হাত) বজায় রেখে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করবেন এবং প্রণাম শেষে বের হয়ে যাবেন। সম্ভব হলে পুরো পথ পরিক্রমা গোল চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করতে হবে। পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ভক্তের সংখ্যা অধিক হলে একাধিকবার পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করতে হবে। পূজাম-পে আগত সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। মাস্ক পরিধান ছাড়া কাউকে পূজাম-পে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। মন্দিরের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ পূজাম-পে প্রবেশ করবেন না। হাঁচি ও কাশির সময় টিস্যু রুমাল বা কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ঢাকনাযুক্ত বিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং জরুরিভাবে তা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা/ধুনচি নাচ এবং শোভাযাত্রা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধর্মীয় উপাচার ছাড়া অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোকসজ্জা বর্জন করতে হবে। পূজাম-পে একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে বসার স্থানটি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিফলিত হয়।
তাজহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আরপিএমপি'র সহকারি পুলিশ কমিশনার (কোতয়ালী জোন) আলতাব হোসেন, রসিকের ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ শামীম, ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রহমত উল্লাহ্ বাবলা, ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিবলু, তাজহাট থানার ওসি তদন্ত রবিউল ইসলাম, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জিলানী, জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ময়েনউদ্দিন আহমেদ টিটু প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন তাজহাট থানা পুলিশের এজিএস আল-আমিন হিরা।
আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, কমিউনিটি পুলিশিং তাজহাট থানা সভাপতি নূর মোহাম্মদ মোস্তাক আলী, সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, সমাজসেবক আবদুল সালাম।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয়টি থানা এলাকায় এ বছর ১৫৮টি পূজামন্ডপ তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মন্ডপ কোতোয়ালি থানা এলাকায়, এখানে ৪২টি মন্ডল রয়েছে। সবচেয়ে কম মন্ডপ হারাগাছে, সেখানে ১৪টি। এছাড়াও হাজিরহাট থানায় ৪১, পরশুরামে ২৩, তাজহাট থানায় ২১ এবং মাহিগঞ্জে ১৮ মন্ডপ। এসব পূজামন্ডপের মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১১৮টি সাধারণ। প্রত্যেকটি মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় শৃঙ্খলা কমিটি তদারিক করবেন।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।