কুলিয়ারচরে কামাল হোসেন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পাুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন, পিপিএম ও পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ আজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে গত ৪ সেপ্টেম্বর কুলিয়ারচর থানার এসআই (নিঃ) ইমদাদুল হোসোইন আইন-শৃঙ্খলা ডিউটিকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অবগত হয়ে কুলিয়ারচর থানাধীন পূর্ব ফরিদপুর সাকিনস্থ জনৈক মোঃ শফিকুল ইসলাম খান @ জজ মিয়ার ব্রহ্মপুত্র নদী সংলগ্ন পতিত জমিতে তাল গাছের নীচে অজ্ঞাতনামা পুরুষ (৩০) ব্যক্তির মৃতদেহ দেখতে পায়। ওই এসআই মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। ইং ০৩/০৯/২০২০ তারিখ দিবাগত রাত হইতে ০৪/০৯/২০২০ তারিখ বেলা ১৪.০০ ঘটিকার মধ্যবর্তী কোন সময়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে ওই অজ্ঞাতনামা ভিকটিমকে কুপাইয়া ও ভোতা অস্ত্রের দ্বারা আঘাত করিয়া হত্যা করেছে মর্মে ওই এসআই এর আবেদনের প্রেক্ষিতে কুলিয়ারচর থানার মামলা নং-০৪, তাং-০৪/০৯/২০২০ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এ মামলাটি রুজু হয়। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) কাজী মাহফুজ হাসান কে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
মৃত দেহের আঘাতের ধরন ও পরিধেয় বস্ত্রে বণর্ণা ঃ মৃত দেহের মাথার সামনে ডান পাশে গুরুতর কাঁটা ও থেতলানো আঘাত, ডান চোখের উপরে ও নিচে ধারালো অস্ত্রের আঘাত, কপালের ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত, মুখের উপরের ও নিচের পাটির দাঁত ভাঙ্গা, বাম চোখের উপরে এবং নাভীর উপরে ও নিচে চামড়া ছিলা জখম। বাম হাতের লম্বালম্বি ভাবে পাঁচ আঙুল কাটা ও বিচ্ছিন্ন। একাধিক আঘাতের কারণে ভিকটিম এর লাশের মুখ মন্ডল বিকৃত হওয়ায় প্রকৃত চেহেরা নিরপন করা সম্বব হয় নাই। ভিকটিমের লাশের গায়ে সাদা রং এর স্যান্ডু গেঞ্চি, পড়নের নিল রং এর জিন্সের প্যান্ট ও কালো বেল্ট ছিল। ঘটনাস্থলে ভিকটিমের এক জোড়া চামড়ার জুতা পাওয়া যায়।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসীন ইউনিটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ঃ ওই হত্যার সংবাদ কুলিয়ারচর থানার ডিউটি কর্মকর্তা থেকে প্রাপ্ত হয়ে এসআই(নিঃ) মোঃ শাহীন আলমের নেতৃত্বে পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলায় ক্রাইমসিন ইউনিট ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিংগার প্রিন্ট(ঋওঠঝ) এর মাধ্যমে অজ্ঞাত লাশ সনাক্ত করণের চেষ্টা করে। কিন্তু ওই লাশের বাম হাতের ৫টি আঙুল অজ্ঞাতনামা আসামিরা কেটে ফেলায় ফিংগার প্রিন্ট (ঋওঠঝ) করা সম্ভব হয়নি। ফলে লাশটির প্রকৃত পরিচয় সনাক্ত করণ সম্ভব হয়নি।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার কার্যক্রম ঃ ওই হত্যাকান্ড সংঘটনের পর হতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা ভিকটিম ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের সনাক্তকরণ সহ মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলায় মামলা হস্তান্তর ঃ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা গত ইং ০৬/১০/২০২০ তারিখে মামলার তদন্তভার গ্রহন করে। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ আজাদ হোসেন ওই মামলাটি তদন্ত করেন।
মৃত ভিকটিম সনাক্তকরন ঃ গত ১৮/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ জৈনক হারুনুর রশিদ ওই মামলার ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী কুলিয়ারচর থানাধীন হাপানিয়া গ্রামের খোকন খান(৪২), পিতা- মৃত হিরু খান এর নিকট আসে। খোকন খানকে দেখে হারুন অর রশিদ তার ভাতিজা কামাল হোসেন এর অবস্থান জানতে চাইলে ওই খোকন অসংলগ্ন কথা বার্তা বলায় তিনি কুলিয়ারচর থানায় যান। কুলিয়ারচর থানা পুলিশ গত ০৪/০৯/২০২০ তারিখে উদ্ধারকৃত মৃত অজ্ঞাত লাশের তোলা ছবি দেখাইলে পড়নের প্যান্ট, জুতা, বেল্ট ও শারিরীক গঠন দেখে জনাব হারুনুর রশিদ ওই মৃত দেহ তার ভাতিজা কামাল হোসেন (৩০), পিতা-মৃত ছিদিাদক আলী পাঠান, সাং-খূরুমখালী, থানা- ফরিদগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর বলিয়া সনাক্ত করে। ওই মামলাটি পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা তদন্ত করছে মর্মে কুলিয়ারচর থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারে।
প্রযুক্তিগত সহায়তা ঃ গত ১৮/১০/২০২০ ভিকটিমের চাচা মোঃ হারুনুর রশিদ ভিকটিম কামাল হোসেনকে সনাক্ত করে পিবিআই কিশোরগঞ্জ অফিসে আসে। পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা ভিকটিমের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম কামাল হোসেনকে হত্যার সাথে জড়িত গ্রুপ সনাক্ত করে।
আসামী গ্রেফতার ও বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি ঃ গত ১৯/১০/২০২০ খ্রিঃ পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আজাদ হোসেন সংগীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। ওই হত্যা মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি সুমন বিশ্বাস (৩০), পিতা- মৃত শচিন্দ্র বিশ্বাস, মাতা- সনজলা রানী বিশ্বাস, সাং- হাপানিয়া, থানা- কুরিয়ারচর কিশোরগঞ্জকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই আসামি ভিকটিম হত্যার সাথে জড়িত বিষয়টি স্বীকার করে এবং স্বেচ্ছায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
উদঘাটিত তথ্য ঃ ভিকটিম কামাল হোসেন ও আসামি খোকন খান মালয়েশিয়া থাকাকালীন সময়ে পরস্পরের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের বন্ধুত্ব উভয় পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বন্ধুত্বের রূপ নেয়। খোকন একাধিক বার চাদপুরে ভিকটিম কামালদের বাড়ীতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে। ০৫ বছর পূর্বে খোকন খান মালয়েশিয়া হতে বাংলাদেশে ফিরলেও ভিকটিম কামাল হোসেন মালয়েশিয়া থেকে যায়। বাংলাদেশে এসেও আসামি খোকন খান ভিকটিম কামালের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। ভিকটিম কামাল হোসেনকে আসামি খোকন খান বিভিন্ন ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া হতে ব্যাংক এর মাধ্যমে ও দেশে ভিকটিমের পরিবার হতে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমান অর্থ (প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা) আনয়ন করে। ভিকটিম কামাল হোসেন মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে আসামি খোকন খান এর নিকট তার ও তার পরিবারের প্রেরিত বিপুল অংকের টাকার হিসাব চায়। আসামি খোকন খান টাকা পয়সার হিসাব দিতে গড়িমসি করতে থাকে। ভিকটিম ক্রমাগত ভাবে আসামি খোকন খান থেকে বিপুল টাকা পয়সার হিসাব চাওয়ায় পরিশেষে আসামি খোকন খান হিসাব দিতে রাজি হয়ে ভিকটিম কামাল হোসেনকে কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ আসতে বলে। ভিকটিম কামাল হোসেন বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের অবগত করে গত ০৩/০৯/২০২০ তারিখ ঘটনাস্থল এলাকায় খোকন খানের উদ্দেশ্যে ঢাকা হয়ে নরসিংদী জেলার মরজাল নামক বাস স্ট্যান্ডে পৌছে। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক আসামি খোকন খান কয়েকজন আসামীদের নিয়ে মরজাল বাস স্ট্যান্ড হতে ভিকটিম কামাল হোসেনকে রিসিভ করে সিএনজি যোগে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ফরিদপুর স্লুইচ গেইটে পৌঁছে। খোকন খান তার আর্থিক দায় এড়ানোর উদ্দেশ্যে তার প্রতিবেশী ও ব্যবসায়ী পার্টনার সুমন বিশ্বাস সহ আরো কয়েকজন আসামি নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে ভিকটিমকে নৃশংসভাবে খুন করে এবং লাশ সনাক্ত যাতে না হয় মুখমন্ডল বিকৃত করে বাম হাতের ৫টি আঙুল কেটে ফেলে। ওই আসামিরা ভিকটিম কামাল হোসেনকে খুন করে তার সাথে থাকা মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ভিকটিমের গায়ের শার্ট খুলে ব্রহ্মপুত্র নদীতে ফেলে দেয়। তদন্তে উদঘাটিত পলাতক আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
মৃত ভিকটিম সনাক্তকরন ঃ মৃত অজ্ঞাতনামা পুরুষ লাশটির নাম কামাল হোসেন (৩০), পিতা- মৃত ছিদিাদক আলী পাঠান, সাং- নুরুমখালী, থানা- ফরিদগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর। ওই ভিকটিম কামাল হোসেন মালয়েশিয়া থাকাকালীন সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলায় কুলিয়ারচর থানার হাপানিয়া গ্রামের খোকন (৪২), পিতা- মৃত হিরু খান এর সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে খোকন দেশে ফিরে আসলেও ভিকটিম কামাল মালয়েশিয়া থেকে যায়। কিন্তু তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। তাদের বন্ধুত্ব উভয় পরিবারের মধ্যে পারিবারিক রূপ নেয়। খোকন কামালকে ব্যবসা বানিজ্য সহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কখনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কখনও নগদ ক্যাশ নেয়। গত ০১ বছর আগে কামাল মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ আসে। ভিকটিম কামাল দেশে এসে খোকন নিকট তার প্রেরিত টাকা হিসাব চায়। খোকন ভিকটিম কামালকে টাকা পয়সার হিসাব দিবে মর্মে কিশোরগঞ্জ আসার জন্য বলাতে ভিকটিম কামাল তার পরিবারের সদস্যগণদের বিষয়টি অবগত করে গত ০৩/০৯/২০২০ খ্রিঃ তারিখ চাঁদপুর থেকে রওয়ানা হয়ে ঢাকা হয়ে কিশোরগঞ্জ আসে। ভিকটিম কামাল কিশোরগঞ্জ এস নিখোঁজ হয়। ভিকটিম কামালের পর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোজি করার পর খোকনের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু খোকন যোগাযোগ না করাতে ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ায় প্রায় দেড় মাস পর ভিকটিমের চাচা হারুনুর রশিদ খোঁজ নিতে খোকনের বাড়ি কুলিয়ারচর কিশোরগঞ্জ আসে। ভিকটিমের চাচা খোকনকে দেখে ভিকটিম কামাল ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে অসংলগ্ন কথা বার্তায় তার সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের চাচা মোঃ হারুনুর রশিদ ওই বিষয়ে আইনগত পরামর্শ নেওয়ার জন্য কুরিয়ারচর থানায় আসলে কুলিয়ারচর থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) .......... ভিকটিম গত ০৪/০৯/২০২০ ইং তারিখে একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়ার বিষয়ে অবগত করে। ওই পুলিশ পরিদর্শকের মোবাইলে থাকা ভিকটিমেন মৃত দেহ বিভিন্ন ছবি ভিকটিমের চাচা মোঃ হারুনুর রশিদকে দেখালে ভিকটিমের পরিধেয় প্যান্ট, ব্যাল্ট, পায়ের জুতা এবং শারীরিক গঠন দেখে ভিকটিম কামাল হোসেন বলে সনাক্ত করে।