মরন ফাঁদ ভবদহ’র যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বছরের পর বছর বিলে ধান চাষ করতে না পারা নিঃশ্ব বিল পাড়ের মানুষ ঘুরে দাড়াতে নিজেদের দেয়া অর্থ ব্যয়ে স্থাপন করেছেন ৫ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন সেচ পাম্প। যশোরের দুই উপজেলার (মনিরামপুর ও অভিয়নগর) জলাবদ্ধ বিলকপালিয়ার ভূক্তভোগিরা বিল থেকে সেচ পাম্পে পানি সরিয়ে আগামী বোরো মৌসুমে বিলের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের স্বপ্ন দেখছেন তারা। পাম্প চালুর ২০ দিনের মাথায় বিল থেকে প্রায় ৮ ইঞ্চি পানি নিষ্কাশন হয়েছে বলে দাবী করেন। বিল পাড়ের মানুষ ধান চাষ করতে পারলে দুই উপজেলার ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে একদিকে বিল পাড়ের মানুষ ঘুরে দাড়াতে পারবে অপর দিকে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
অবশ্য পাম্প চালুর শুরুতে বিদ্যুত সংযোগে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) বেকে বসে। পাম্পে বিদ্যুত সংযোগ না দিতে যপবিস-২ (যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২)-তে পাউবো আপত্তি পত্র দেয়। তাদের আপত্তিতে পাম্পে বিদ্যুত সংযোগে বিলম্ব হয়। পরবর্তিতে যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও যশোর-৬ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের জোর প্রচেষ্টায় সেচ পাম্পে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়।
আশার কথা হলো এখন পাউবো নিজেরাই ভবদহ স্লইচগেটের (২১ ও ৯ ভেন্ট)-এ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, ১৯৬২-৬৩ সালে ভবদহ এলাকায় তিনটি পোল্ডার, ১০ হাজার ৫৬৬ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ও ২৮২টি গেট নির্মান করায় জোয়ারের পানি বাহিত পলি বিলগুলিতে বাধা সৃষ্টি করায় ভূমি গঠন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। ১৯৮৬ সালে স্থায়ী জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়ে ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ আকার ধারন করে। এ সময় এ অঞ্চলেল মানুষ বাস্তভিটা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভবদহ সংকট উত্তোরনে সরকারের গৃহীত শত শত কোটি টাকার প্রকল্প এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোন কাজে আসেনি।
সরেজমিন ভবদহ বিলপাড়ে গেলে কার্ত্তিক মন্ডল, বিষু মন্ডল, নরেশ বিশ্বাস, মনিশান্ত মন্ডলসহ একাধিক ভূক্তভোগিদের সাথে কথা হয়। তারা জানান, বছর দু’য়েক আগেও বোরো মৌসুমে বিলের প্রায় জমিতে ধান চাষ হতো। কিন্তু বর্তমানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ধান চাষ সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিলকপালিয়া পাড়ের মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ূর রহমানসহ কপালিয়া, মনোহরপুর, পাঁচাকড়ি, বালিদহ, নেহালপুর ও অভয়নগর উপজেলার কালিশাকুল গ্রামের পরিতোষ সরকার, মাষ্টার চিত্তরঞ্জন, হাফিজুর রহমান, সাইদুজ্জামান, মোজাম হোসেন ও হাফিজুর রহমান মিলে পাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
পাম্প কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ূর রহমান জানান, সেচ পাম্প স্থাপনে গ্রামবাসীও সাড়া দেয়। গ্রামবাসির সম্মিলিত অর্থে পাম্পটি স্থাপিত করা হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, বিলের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে (মনিরামপুর অংশে ১২’শ হেক্টর ও অভয়নগর অংশে ৮’শ হেক্টর) ধান চাষ হলে প্রায় ৬ হাজার ৬’শ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ভবদহ এলাকায় আসলে তিনি পাম্প স্থাপনের বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি ভবদহ স্লইচ গেটে পাম্প স্থাপনে যাচাই-বাছাই করতে যশোর জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পাউবো’র যশোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প স্থাপনে ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। ভবদহ ও তৎসংলগ্ন এলাকা হতে পানি সরাতে ও আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকরা বিলে ধান চাষ করতে পারে সেজন্য-এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত অনুমোদন করিয়ে কাজ শুরু হবে।