অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী।
মোছাঃ জাহানারা খাতুন, পিতা মৃত আফসার আলী, মাতা-জবেদা বেওয়া, ঠিকানা- রনতিথা, রায়গঞ্জ,সিরাজগঞ্জ। বয়স-২১ বৎসর, বৈবাহিক অবস্থাঃ অবিবাহিত, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনার্স ৩য় বর্ষ। পেশা- ছাত্রী। আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভাল। মোছাঃ জাহানারা খাতুন ১৯৯৮ সনে জন্ম গ্রহন করেন। তাহার তিন বৎসর বয়সে বাবা মৃত্যু বরন করেন। পরিবারে আমরা পাঁচ ভাই বোন। পরিবারের উর্পাজনের কেহ নিা, তাই বাধ্য হয়ে আমার মা হাতে সুতার কাজ শুরু করেন। অভাবের তাড়নায় সকল সময় ভাতের জন্য মায়ের নিকট কান্নাকাটি করিতাম। আত্মীয় স্বজনের নিকট গেলে তাহারা দুরদুর করে তাড়িয়ে দিতো। মা অত্যান্ত পরিশ্রম করে অর্থ সংগ্রহ করে স্কুলে বর্তি করে দেয় বই পুস্তুক খাতা কলম ক্রয় করার মতো অর্থ যোগান দেয়ার মতো কেহ ছিল না। অনেক কষ্টে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করি। এবং কেরোসিন বাতি জ্বালিয়ে অধ্যয়ন শুরু করে এসএসসি পরীক্ষা দেই সাথে কাজের সন্ধান করতে থাকি। সেলাই মেশিনের কাজ শেখার জন্য অনেকের কাছে গিয়েও টাকা না থাকায় কাজ শেখা সম্ভব হয় নাই। অবশেষে নিকটবর্তী এক ফুফুর নিকটে কান্নাকাটি করে বলায় সে রাজি হয়ে ১৫ দিনে কাজ শিখে বাড়ি পার্শ্বের এক ভাবির মেশিনে কাজ শুরু করি। এমতবস্থায় কিছুদিন পর উপার্জিত টাকায় একটি পুরাতন সেলাই মেশিন ক্রয় করি ও পাশাপাশি টিউশনি শুরু করি এবং অনার্সের ভর্তি হই। এই ভাবে চলতে চলতে রায়গঞ্জ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে ব্লক বাটিক ট্রেডে ভর্তি হয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেই। পাশাপাশি নিজের কাজ করা জামা কাপড় অনলাইনে বিক্রয় করে মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা উপার্জন করি। সাথে বিনামূল্যে ছেলেমেয়েদের দর্জি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তাদের প্রশিক্ষন দেই। এভাবে আমি মোটামুটি ভাবে এখন সাবলম্ভি।
শিক্ষা চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী মোছাঃ ময়না খাতুন, পিতা- মোঃ ফিরোজ মাহমুদ, মাতা মোছাঃ জাহানারা খাতুন। ঠিকানা- আটঘড়িয়া, রায়গঞ্জ,সিরাজগঞ্জ। বয়স-২৬ বৎসর, অবিবাহিত। শিক্ষাগত যোগ্যতা- নার্সিং ডিপ্লোমা, পেশা- চাকুরীজীবি। আর্থিক অবস্থা -মধ্যবিত্ত ২০১০ সালে এসএসসি ২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্বেও ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় নাই। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষকে সেবা করার তাই বেসরকারি নার্সিং ইন্সিটিউটে ভর্তি হই এবং পাশ করি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়া সত্বেও অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়েিেছ এবং পারিবারিক ভাবে বিভিন্ন বাধার সম্মুক্ণি হয়েছি। সেই বাধাকে অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন এবং দরিদ্রতাকে জয় করেছি। সমাজ থেকে কিছুই পাইনি, পেয়েছি শুধু অপমান ও ধিক্কার, সমাজের চোখে আমি বড় হয়েছি। লেখাপড়ার প্রয়োজন নেই এখন বিয়ে দিতে হবে। একথা মাথায় না রেখে সে সিরির উপরের উঠতে থাকে। এবাবে সে কোন একসময় সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্মথ্য হয়েছে। এখন তার গ্রামের ছেলেমেয়েরা এমনকি পার্শ্ববর্তীরা তাকে অনুস্বরনকরে নিজেদেরকে সমাজে প্রতিষ্টিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন ময়না খাতুন ঢাকা ইবনেসিনা হাসপাতালে সিনিয়র সহকারি নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে সতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী।
গীতা রানী মাহাতো, পিতা/স্বামী গজারী মাহাতো, মাতা- শহুরী বাল্ াঠিকানা- গ্রামঃ ক্ষিরতলা, শালিয়াগাড়ী,রায়গঞ্জ,সিরাজগঞ্জ। বয়স- ২৪ বছর(বিধবা) শিক্ষাগত যোগ্যতা - নবম শ্রেণী, পেশায় গৃহিনী, সন্তান-১জন, আর্থিক অবস্থা মধ্যবিত্ত, গিতা যখন নবম শ্রেনীর ছাত্রী তখন তাহার ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার যৌতুকে বাল্য বিবাহ হয়। বিয়ের পর গিতা পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকে এমতবস্থায় তাহার গর্ভে মস্তান আসে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে বাধ্য হয়ে তাহার শশুর তাহার লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। এর এক বৎসর পর গিতার স্বামী ব্রেন টিউমার হয়ে মৃত্যু বরন করেন তখন তাহার নবাগত সন্তানের বয়স মাত্র ৪ মাস। স্বামীর মৃত্যুর ১ মাসের মাথায় গিতার শশুর বাড়ির লোকজন মধ্যরাতে পাড়া প্রতিবেশির অজান্তে জোর পূর্বক হাতাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গিতা ৪ মাসের শিশুকে বুকে চাপিয়ে ধরে দিশে হারা হয়ে কোন এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর একতার নারী সংঘঠনের উদ্যোগে মেম্বরের মাধ্যমে শালিসে যৌতুকের টাকায় কেনা .২০ শতক জমি ফেরৎ পেয়ে বাবার বাড়ি চলে এসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। দীপশিখা সংস।তাকে থেকে সেলাই কাজ শিখে সেলাই কাজ আরম্ভ করে সাথে শুকুর পালন করে লাভবান হন। এখন স্বামীর বাড়িতে ১টি টিনের ঘর তৈরি করে ছেলেকে নিয়ে বসবাস করার জন্য। গিতা এখন একতা বন্ধন নারী সংগঠনের সভাপতি ছেলে লেখাপড়া করছে। গিতা নির্যাতনের বিভিষীকা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে স্বাধীন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সফল জননী নারীঃ
সারথী মাহাতো, স্বামী মৃত- অনীল চন্দ্র মাহাতো, মাতা- গন্ধেশ্বরী মাহাতো। ঠিকানা- শ্যামেরঘন, আমসারা, সরঙ্গা, সিরাজগঞ্জ বয়স- ৪৯ বৎসর, বৈবাহিক অবস্থা -বিধবা, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পূন্ন, পেশা- গৃহিনি, সন্তান সংখ্যা ২ জন, আর্থিক অবস্থা হত দরিদ্র। সারর্থীর জীবন খুবই সাধারণ একটি মাটির ঘর ছিল অল্প বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পর ২ সন্তানকে নিয়ে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাহাকে দিন অতিবাহিত করতে হয়। কিন্তু জীবন যুদ্ধে সে হেরে যায়নি। ২ সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য অমানবীক পরিশ্রম করতে হয় তাকে। নিজে না খেয়ে তা সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন। তারপরও সে কাহার কাছে হাত পাতেন নি। অন্যের জমিতে দিনমুজুরের কাজ করে সংসার পরিচালনা করেছেন। বাড়ী সহ ৪৯শতক জমি ছিলতার। বাড়ীর আশপাশে বাশগাছ ও গুরুর দুধ বিক্রি করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। এভাবে ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় ছেলে দিনাজপুর মেডিকেল থেকে ডাক্তারী পাশ করে। ছোট ছেলে ঢাকাতে কোন প্রাঃ কোঃ চাকরী রত আছেন।সারথীর পরিশ্রমের তার পরিবার এখন সচ্ছল। তার স্বপ্ন অন্য মায়েরা তাদের সন্তানদের যেন উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে তাহাই তাহার প্রত্যাশা।
সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখেছে যে,নারী
মোছাঃ মমতা খাতুন, পিতাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন,স্বামী-মোঃ আইনুল হক,মাতাঃ মোছাঃ আমিনা খাতুন। ঠিকানাঃ পশ্চিম মথুরাপুর,সাহেবগঞ্জ,রায়গঞ্জ,সিরাজগঞ্জ,বয়সঃ৪২ বৎসর,বৈবাহিক অবস্থা-বিবাহিত-সন্তান-২জন,শিক্ষাগত যোগ্যতা -এস.এস.সি। পেশা-সমাজ সেবিকা আর্থিক অবস্থা-মধ্যবিত্ত। মমতা খাতুন মোট ৪জন সদশ্য নিয়ে একটি সুখি পরিবার। স্বামী একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক। ছেলে মেয়ে কলেজ লেখাপড়া করে। মমতা খাতুনের ১৮ বৎছর পুর্ন হওয়ার পূর্বেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ে সংসার কি তার জানা ছিলনা, ধিরে ধিরে শিখতে থাকলো তার সংসার জীবনে। নিজের খুব ইচ্ছে ছিল এসএসসি পাশকরার। সংসার কর্মের মাঝে মাঝে লেখাপড়াও করতেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ২০বৎসর বয়স পুর্নের পূর্বেই প্রথম সন্তান ঘরে আসায় তাহার আর লেখাপড়া করা সম্বভ হয় নাই। স্বামী সন্তান সংসারের কাজকর্ম করেই কেটে যায় অনেক বছর। পরবর্তিতে রায়গঞ্জ উপজেলায় গুডনেইবার্স ফারমারর্স ২০০০নারীকে নিয়ে নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন করেছে। সমিতির সদস্যরা মাসিক সঞ্চয় প্রদান করে মাসিক বাৎসরিক ঋণ প্রদান করে। বর্তমানে মমতা খাতুন এই সমিতির সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন। এবং নারীরা যে,যে কাজে পারদর্শী তাদেরকে ১৩টি ভাগে ভাগ করে সহজ শর্তে সেবা মূলক ঋনপ্রদান করে নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করার নিরলস ভাবে কাজ করছে। এই গুপগুলোর সভাপতি দায়ীত্ব পালন করেন মমতা খাতুন। এছারাও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ও সচেতনতা সর্¤úকে আলোচনা ও বাল্য বিয়ে বন্ধকরার ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন। এছারা ঘুড়কা ইউনিয়নে গুডওয়াটার প্রজেক্ট স্থাপন করেছেন ও এই প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়ীত্ব পালন করে আসছেন। সেই সাথে শিশু শ্রম নারী নির্যাতন পরিবারের অশান্তি শিশু শ্রমের শিকার হওয়া শিশুদের বিদ্যালয়গামী করতে ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের সহযোগীতায় ন্যায় বিচার পেতে কাজ করেন। এমনকি ২০১৯ সালে একটি ছোট মেয়ের ব্রন টিউমার থেরাপি বাবদ গুডনেইবার্স এর সহযোগীতায় ৩,১৫,০০০/= ও বিভিন্ন অসুস্থ নিপিড়িত অসহায় ব্যাক্তি/পরিবার/ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজন বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেন। মমতা খাতুনের সমাজে গ্রহন যোগ্রতা এবং ব্রাপক পরিচিতি রয়েছে এবং সকল নারী সমাজ তাকে অনুসরন করে। সফল নারী হিসাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত রাজিবুল আলম ও জয়িতা অন্বেষ¦নে বাংলাদেশ শীর্ষক সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি বলেন জয়িতারা বাংলাদেশের উন্নয়নশীল প্রতিচ্ছবি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাছরিন বলেন জয়িতারা জীবনের জন্য সংগ্রাম করে নিজেদের শ্রেষ্টতদ্ব প্রমান করেছেন। অভিনন্দন তাদের।