ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের দুইশত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সু-সজ্জ্বিত কামারখালী বানিজ্যিক কেন্দ্র রক্ষার দাবীতে সোচ্চার কামারখালীবাসী। ঐতিহ্যবাহী এ বাজার রক্ষার দাবীতে রাজপথে নেমেছেন তারা। ঐতিহ্যবাহী এ বানিজ্যিক কেন্দ্র রক্ষার দাবী করছেন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ।
ঐতিহ্যবাহী এই বানিজ্যিক কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ৩টি বেসরকারী পাটকল। আছে বহুতল মার্কেট ভবন, ব্যাংক, বীমা অফিস, এনজিও সহ ৫টি শিশু বিদ্যালয়, ৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি বেসরকারী উচ্চমাধ্যমিকবালিকা বিদ্যালয়, একটি সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, একটি ফাজিল মাদ্রাসা ও হেফজখানা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ ডিগ্রী কলেজসহ মসজিদ ও মন্দির।
এই বিশাল এই বানিজ্যিক কেন্দ্র থেকে ইজারার মাধ্যমে প্রতি বছর ৪০ থেকে৪৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে সরকারের। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও ইনকাম ট্যাক্স নবায়নের মাধ্যমে সরকারের প্রচুর রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। বাজারের মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে চলাচল করে অত্র এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অশংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও হাজার হাজার মানুষ।
এই বানিজ্যিক কেন্দ্রে ব্যবসা-বানিজ্যে মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে এই বিশাল এই বানিজ্যিক কেন্দ্রর মধ্যদিয়ে রেল লাইন স্থাপন করা হলে বেকার হয়ে পড়বে প্রায় ৩হাজার ব্যবসায়ী। ফলে এসব ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসে যাবে।
এছাড়াও কামারখালীর ঐতিহ্যবাহী এ বানিজ্যিক কেন্দ্রে ৫ থেকে ৭টি ইউনিয়নের কৃষকের উৎপাদি কৃষি পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের একমাত্র কেন্দ্রস্থল এটি।
কামারখালী বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম মন্ডল বলেন, কামারখালী ঐতিহ্যবাহী বানিজ্যিক কেন্দ্রে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার স্থায়ী ব্যবসায়ী ব্যাবসা বানিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আর প্রতি শুক্র বার ও সোমবার এ বানিজ্যিক কেন্দ্রে হাট বসে। হাটে আশেপাশের ১৫-২০টি গ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য নিয়ে আসেন এ বানিজ্যিকেন্দ্রে। প্রতি হাটে ১০-১৫হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তিনি আরো বলেন, রেলের উন্নয়ন আমরাও চাই, তবে আমাদের এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতি করে নয়। আমাদের দাবী বাজারের ভিতর দিয়ে লেল লাইন না করে বাজারের পাশ দিয়ে রেল লাইন স্থাপন করা হোক।
কামারখালী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি কাজী মতিউল ইসলাম মুরাদ বলেন, ১৯৪১সালে তদানিন্তন রেলকর্তৃপক্ষ কামারখালী পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আড়কান্দিনামক স্থানের রেল সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পরবর্তীতে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে মধুখালী হইতে মাগুরা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এই উদ্দ্যোগকে স্বগত জানাই। একই সাথে গণতন্ত্রের মানস কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবা জানাই নতুন করে রেল লাইন সম্প্রসারণ করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী কামারখালী বানিজ্যিককেন্দ্র সংলগ্ন কিছু জমি রেল কোম্পানি ১৯৪১ সালে অধীগ্রহন করিয়াছিল। ওই জমি রেল কোম্পানি ইজারা প্রদান করিয়াছেন। যাহা কামারখালী বানিজ্যিক কেন্দ্রের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা চাই দখলদার উচ্ছেদ করিয়া রেল কোম্পানি ওই জমির উদ্ধার করে রেল সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করবে। আমরা চাই কামারখালী বানিজ্যিক কেন্দ্রের পাশ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু অরুন কুমার সরকারের বাড়ীর দক্ষিনে ফাঁকা জায়গা দিয়ে মধুমতি নদীর উপর রেলসেতুটি স্থাপন করিয়া মাগুরার রেললাইন স্থাপন করা হলে মধুমতি নদী শাসনের মাধ্যমে রক্ষা পাবে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ এর জন্মস্থান ও স্মৃতি যাদুঘরসহ অত্র এলাকার ৫টি গ্রামসহ কামারখালী বানিজ্যিক কেন্দ্রে গড়ে উঠা সকল প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির সর্বসাধারনের চলাচলের রাস্তা।